কৌশলগত বিনিয়োগকারী (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) চূড়ান্ত করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) আরও তিন মাস সময় দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলতি বছরের ৮ জুনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী চূড়ান্ত করতে হবে।
Advertisement
এর আগে ডিএসইকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী চূড়ান্ত করতে চলতি বছরের ৮ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে তারা কৌশলগত বিনিয়োগকারী খুঁজে পেলেও চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারেনি। চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে ডিএসইর দেয়া প্রস্তাব বিএসইসি যাচাই-বছাই প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করতে না পারায় গত ৮ মার্চ সময় চেয়ে বিএসইসিতে আবেদন করে ডিএসই। তারই আলোকে ডিএসইকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী চূড়ান্ত করতে ৩ মাস সময় দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ বিষয়ে ডিএসইর প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করতে বিএসইসির কাছে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। তারা সেই আবেদন গ্রহণ করে ৮ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছে।
Advertisement
এদিকে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এখনও পর্যন্ত কৌশলগত বিনিয়োগকারী খুঁজে পায়নি। ফলে এই প্রতিষ্ঠানটি এক বছর সময় চেয়ে গত ৫ মার্চ আবেদন করে। সিএসইর আবেদন গ্রহণ করে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন-২০১৩ এর ১৪(১) ধারার ক্ষমতা বলে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করাসহ এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম শেষ করতে সিএসইকে আরও এক বছর সময় দিয়েছে বিএসইসি। প্রতিষ্ঠানটিকে আগামী বছরের ৮ মার্চের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।
ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের শর্ত অনুযায়ী, ব্লকড হিসেবে থাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ৬০ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ (সংরক্ষিত শেয়ার থেকে) কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে এবং বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার আইপিও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করতে হবে। অন্যদিকে ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান।
স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে ২০১৬ সালের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে স্টক এক্সচেঞ্জের সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু ডিএসই এবং সিএসই ওই সময়ের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়। ফলে স্টক এক্সচেঞ্জের আবেদনের প্রেক্ষিতে ছয় মাস সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু সে দফাতেও ব্যর্থ হয় উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। এরপর আরও কয়েক দফা সময় বাড়ায় বিএসইসি।
এদিকে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে ডিএসইর পর্ষদের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসিতে জমা দেয়া হয়। ওই দিন বিএসইসি তা যাচাই-বাছাই করতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে এবং ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
Advertisement
বিএসইসির গঠিত কমিটি শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবের বেশকিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এমনকি প্রস্তাবের একটি অংশ আইনের পরিপন্থী বলেও মত দেয় কমিটি। ফলে ডিএসইর কাছে বেশকিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চায় বিএসইসি। এর প্রেক্ষিতে ডিএসই থেকে বিএসইসিকে জানানো হয় শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়াম তার প্রস্তাবের বেশকিছু শর্ত উঠিয়ে নিতে রাজি হয়েছে।
তবে ডিএসইর ওই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পর্যালোচনা কমিটির মন্তব্যে বলা হয়েছে, কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে চীনের কনসোর্টিয়ামের স্বার্থ রক্ষায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেক শর্ত দিয়েছে। এ ছাড়া কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে বিএসইসি ব্যাখ্যা চাইলেও ডিএসই কর্তৃপক্ষ তা করেনি, বরং বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পর্যালোচনা কমিটিকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে বিএসইসি। কমিটির ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
এমএএস/এমএমজেড/পিআর