ঘরে ছোট বাচ্চা, তাকে নিয়ে সব সময় চিন্তায় থাকি। সকাল, সন্ধ্যা বলে কোনো কথা নেই। সব সময় মশা কানের কাছে ভুন ভুন করে। খেতে বসেও শান্তি নেই। শুধু কামড়াই না, মাঝে মধ্যে মুখের ভেতরেও মশা ঢুকে যায়। মশার যে উৎপাত শুরু হয়েছে তাতে টেকাই দায়। বলছিলেন, রামপুরা মোল্লাবাড়ির বাসিন্দা মো. রবিউল ইসলাম।
Advertisement
তিনি বলেন, সন্ধ্যার আগেই বাসার সব জানালা-দরজা বন্ধ করে দিই। সকালে সূর্য উঠার আগে আর খোলা হয় না। কিন্তু তাতেও মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। কীভাবে যে ঘরের ভেতরে মশা ঢুকে পড়ে সেটা বোঝার উপায় থাকে না। রোহানকে (দুই বছরের ছেলে) যথা সম্ভব চেষ্টা করি মশারির ভেতরে রাখতে। কিন্তু এত ছোট বাচ্চা তো আর এক স্থানে স্থির হয়ে থাকে না। ও সারাঘর ছোটাছুটি করে বেড়ায়।
তিনি আরও বলেন, বন্ধ ঘরে বাচ্চা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এটা ওর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও, বদ্ধ ঘরে রাখতে হয়। কারণ মশার কামড় আরও ক্ষতিকর। বিকেল ৫টার পর ঘর থেকে বের হয়ে, গেটের কাছে গেলেই চোখে পড়ে মশার ঝাঁক। সুযোগ পেলেই এসব মশা ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মশার হাত থেকে যেন রক্ষা নেই। রাতে মশারির ভেতরেও মশা ঢুকে পড়ে। শুধু মোল্লাবাড়ি নয় রামপুরার জাকের গলি, কুঞ্জবোন, জামতলা, ভুঁইয়াপাড়া, ওলন, ওয়াপদা, খিলগাঁও, বনশ্রী, গোড়ান, বাড্ডা সবখানেই প্রায় একই অবস্থা। এসব অঞ্চলের কমপক্ষে ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশন থেকে নিয়মিত মশার ওষুধ দেয়া হয় না। মাসে এক থেকে দুই বার ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছেটানোর দৃশ্য চোখে পড়ে। আবার কিছু কিছু এলাকয় চলতি বছরে একবারের জন্যও ফগার মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছেটানো হয়নি। এর মধ্যে রযেছে- রামপুরা জাকের গলি, টিভি রোড, ওলন রোড।
Advertisement
এসব এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এমনিতেই সব সময় মশার উৎপাত লেগেই থাকে। এবার একটু বেশিই। রাস্তা-ড্রেন খোঁড়াখুঁড়ি-এর জন্য হতে পারে। মাসের পর মাস ধরে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কিন্তু কাজই শেষ হচ্ছে না। ড্রেনও উন্মুক্ত রয়েছে, ফলে এসব ড্রেন যেমন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, তেমনি মশাও বাড়চ্ছে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই ক্রাস প্রোগ্রাম (ব্যাপক ভিত্তিতে মশা নিধন কর্মসূচি) চালু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল জাগো নিউজকে বলেন, মশা নিধনে আমরা বছরের শুরু থেকেই ক্রাস প্রোগ্রাম চালু করেছি। প্রথম ধাপের ক্রাস প্রোগ্রাম শেষ, এ সপ্তাহে আবারো ক্রাস প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। এছাড়া ডোবা, নর্দমাসহ যেখানে জলাশয় আছে সেখানে মশা নিধনেও আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি।
বিভিন্ন কার্যক্রম চালানোর পরও মশার উৎপাত বন্ধ না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মশা শুধু ঢাকাতেই জন্ম নেই না। ঢাকার বাহিরেও জন্মায়। এখন গ্রাম-অঞ্চলেও মশা বেড়ে গেছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি ঢাকাতে মশার উৎপাত কমাতে।
Advertisement
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছেটানো হয় না বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ওয়ার্ড কমিশনারদের দায়িত্ব দিয়ে মশার ওষুধ ছেটানোর ব্যবস্থা করেছি। তারপরও যদি কোনো এলাকায় ওষুধ ছেটানো না হয়, এমন অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি দেখব।
বনশ্রী সি ব্লকের বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর মশার উৎপাতে একস্থানে ৫ মিনিটও স্থির হয়ে থাকা যায় না। জানালা-দরজা বন্ধ করে মশার কয়েল জ্বালিয়েও মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। কয়েক মাস ধরেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের কার্যত কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মাসে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই বার ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছেটানো হয়।
পশ্চিম রামপুরার ওলন রোডের বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর ধরে রামপুরায় বসবাস করছি। আগে দেখতাম নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছেটানো হত। কিন্তু দুই-তিন বছর ধরে ফগার মেশিন চোখেই পড়েনি। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়িতে মশার উৎপাত এবার মনে হচ্ছে একটু বেশিই। কয়েল জ্বালিয়ে, মশারি ঝুলিয়েও মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে খেতে বসলে তো মশার উৎপাত বেড়ে যায়। শান্তি করে খাওয়ার উপায় নেই।
এমএএস/এমআরএম/আরআইপি