বিশেষ প্রতিবেদন

সহসা চালু হচ্ছে না বিমানের নতুন রুট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোম সফরে ঢাকা-রোম-ঢাকা ফ্লাইট চালুর দাবি উঠলেও আগামী ছয় মাসে বিমানের কোনো নতুন রুট চালুর সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে বিমানের বহরে চলছে চরম উড়োজাহাজ সংকট। বহরে ১৩টি উড়োজাহাজ থাকলেও একটির লিজের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি, যে কোনো দিন চলে যাবে সেটি। আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও দুটি উড়োজাহাজের লিজচুক্তি শেষ হবে।

Advertisement

হজ ফ্লাইট পরিচালনা করতে এরই মধ্যে তিনটি উড়োজাহাজ সংগ্রহে লিজের টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদের লিজে আরও দুটি উড়োজাহাজ আনার চেষ্টা করছে বিমান।

এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে ঢাকা-রোম-ঢাকা রুট চালু করবে বিমান- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর নভেম্বরের মধ্যে বিমান বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্মের দুটি ড্রিমলাইনার। আগামী বছরের মাঝামাঝি আসবে আরো দুটি। চলতি বছরেই আমরা দূরপাল্লার কয়েকটি রুট চালু করতে পারব।

ঢাকা-রোম-ঢাকা রুট চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার এ রুট চালুর সিদ্ধান্ত নিলে আমরা যে কোনো মূল্যে সেটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকর করব। তবে বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনই ঢাকা-রোম-ঢাকা রুট চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই।

Advertisement

গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রোমের পার্কো দ্য প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড এসপিএতে আওয়ামী লীগের ইতালি শাখা আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকা-রোম-ঢাকা ফ্লাইট চালুর বিষয়ে কথা বলেন। তিনি এ রুট বন্ধের জন্য তৎকালীন বিএনপি সরকারকে দায়ী করেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামালও ইতালির মিলানের লোম্বার্দিয়া আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনায় বিমানের রোম ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দেন। শাহজাহান কামালের ওই আশ্বাসের দুদিন পর গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রোমের পার্কো দ্য প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড এসপিএতে আওয়ামী লীগের ইতালি শাখা আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকা-রোম-ঢাকা ফ্লাইট চালুর বিষয়ে কথা বলেন। তিনি রুটটি বন্ধের জন্য তৎকালীন বিএনপি সরকারকে দায়ী করে বলেন, তারা বিমানকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাভজনক হলে ঢাকা-রোম-ঢাকা সরাসরি বিমান ফ্লাইট পুনরায় চালু হবে। বিএনপি সরকারের দুর্নীতি এবং তাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ বিমানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। লাভজনক হলে আমরা পুনরায় ঢাকা-রোম-ঢাকা ফ্লাইট চালু করব।

প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন আশ্বাসের কথা শুনে বিমানের সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেন। শুরু হয় নানা হিসাব-নিকাশ।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অব্যাহত লোকসান এবং আদম পাচারের অভিযোগে ২০১৫ সালের এপ্রিলে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-রোম-ঢাকা ফ্লাইট। রোম ফ্লাইটে ভুয়া ট্রাভেল ডকুমেন্টস দিয়ে আদম পাচারের করণে বিমানকে প্রায়ই জরিমানা করতো রোমের ইমিগ্রেশন। বিমানের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী রাতারাতি বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেলেও তাদের অপকর্মের কারণে ডিপোর্টি যাত্রীপ্রতি (নির্বাসিত যাত্রী) বিমানকে লাখ লাখ টাকা গুণতে হতো। বিমানের সিকিউরিটি বিভাগ ও পোস্ট ফ্লাইট এনালাইসিস-পিএফএ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে মার্চে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাইল হেউড দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মধ্যে এপ্রিলে ঢাকা-রোম-ঢাকা ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছর ৭ এপ্রিল থেকে এ রুটে বিমানের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

১৯৮১ সালে ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে বিমান। শুরুতে এ রুটে সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট চলাচল করতো। এক দশক পর ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে একটি করা হয়। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ইতালিতে বসবাস করছেন। তাদের অধিকাংশই বিমানের ফ্লাইটে দেশে আসা-যাওয়া করতেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার ইতালি সফর করেন। এ সময় প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।

আরএম/এমএআর/পিআর