আইন-আদালত

‘যা হওয়ার হোক, আমি নীলকে দেব না’

মায়ের কাছ থেকে আট মাস ধরে দূরে রাখা খুলনার সোনাডাঙ্গার ২২ মাসের শিশু মৌসুম গাইন নীলকে হাজিরের আদেশ এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি রেখেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য আগামী ১৪ জানুয়ারি (রোববার) পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আদালত।

Advertisement

রোববার (৭ জানুয়ারি) নির্ধারিত দিনে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে নীলকে হাজির করতে হাইকোর্টের আদেশ পৌঁছেছে কি না -তা জানাতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। এর আগে ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ৭ জানুয়ারি শিশুটিকে আদালতে হাজির করতে তার চাচা ও দাদিকে নির্দেশ দেন। আজ (৭ জানুয়ারি) শিশু নীলকে হাজির করতে বলা হয়। কিন্তু শিশু নীলকে আদালতে আজ হাজির করা হয়নি।

নির্ধারিত দিনে আদালত আইনজীবীকে বলেন, শিশুটিকে হাজির করা হয়েছে কি না? -জবাবে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, না। আদালত বলেন, বাবা কোথায়? আইনজীবী বলেন, বাবার কোনো ট্রেস (সন্ধান) নেই। সম্ভবত শিশুটিকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিশুর দাদি বলেছেন- ‘আমি শিশুকে (নীলকে) দেব না, যা হওয়ার তাই হোক।’

Advertisement

আদালত আবারও জানতে চান, বাবা-মায়ের কাছ থেকে ২২ মাসের শিশুকে কীভাবে নিলো? জবাবে আইনজীবী বলেন, তাদের বাড়ি হচ্ছে খুলনায়। কিন্তু নীলের বাবা ডেমরায় চাকরি করতো। নীল জন্ম নেওয়ার পর তার চাচা ও দাদি বিভিন্ন সময় দেখার কথা বলে নিয়ে যেত। এ সুযোগে গত বছরের এপ্রিলে তাকে নিয়ে আর ফেরত দেননি। এরপর শিশুটির বাবারও খবর পাওয়া যায়নি। চাকরিও করছে না।

এরপর আদালত বলেন, হাজিরের আদেশ পৌঁছেছে কি না -এটা জানাতে হবে। আগামী রোববার (১৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত রাখা হলো।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, নীলের মাকে ফোনে নীলের দাদি বলেছেন- ‘আমি শিশুকে দেব না, যা হওয়ার তাই হোক।’ নীলের মা এটাও শুনেছে যে, তাকে সম্ভবত ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

স্বামী-স্ত্রী দুইজন দুই ধর্মের অনুসারী। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু স্বামীর পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। এর মধ্যে তাদের কোল জুড়ে আসে সন্তান মৌসুম গাইন নীল।

Advertisement

নিজ পরিবারকে দেখানোর কথা বলে শিশুটির দাদি নিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন দেখা পায়নি মা ফরিদা ইয়াসমিন। গত বছরের ১৭ এপ্রিল তার দাদী ও চাচা তাকে নিয়ে যায়। এরপর আর তাকে ফেরত না দেওয়ায় হাইকোর্টে হেবিয়াস করপাস রিট দায়ের করে শিশুটির মা।

শিশু নীলের মা ফরিদা ইয়াসমিন মনি জানান, আমি মুসলমান। আর আমার স্বামী নিউটন গাইন হিন্দু ধর্মালম্বী ছিলেন। পরে সে ধর্মান্তরিত হয়ে লিটন হোসেন নাম গ্রহণ করেন। এরপর আমাদের বিয়ে হয় কিন্তু তার পরিবার আমাদের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু আমার বাবু হওয়ার পর থেকে ওদের সঙ্গে আমাদের একটি ভালো সম্পর্ক হয়। ঢাকার মুগদার বাসায় আমার শশুর বাড়ীর লোকেরা আসা যাওয়া করতো।

তিনি আরও বলেন, এক পর্যায় আমার শশুর বাড়ী থেকে আমার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু ওই টাকা দিতে না পারায় স্বামীর সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের জেরা ধরে আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যায়। এর এক পর্যায় আমার বাবুকে তারা নিয়ে চলে যায়। পরে আমি আমার স্বামী-শাশুরির বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা দায়ের করি। কিন্তু তাতেও আমার বাবুকে না পাওয়ায় হাইকোর্টে আসি।

এফএইচ/আরএস/এমএস