‘আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়্যা খাবেন।’ ঘুষ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এমন বক্তব্যকে দুর্নীতি রোধে সরকারের অসহায়ত্বের প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা।
Advertisement
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্য জাতিকে অবাক করেছে। মন্ত্রীর এই বক্তব্য দুর্নীতি ও অনিয়মকে প্রশ্রয় দেবে।’
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে সমাজের অবক্ষয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই শিক্ষার সর্বনাশ ঘটে গেছে। ঘুষ ছাড়া শিক্ষা ভবনে একটি ফাইলেও সই হয় না। তার এই বক্তব্য ঘুষ প্রথাকে আরও উসকে দেবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলির সঙ্গে কথা হয় এই প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কোন প্রেক্ষাপটে তিনি (শিক্ষামন্ত্রী) এমন মন্তব্য দিয়েছেন তা আমার জানা নেই। তবে যদি এমন মন্তব্য করেই থাকেন, তবে সেটা সমাজের জন্য অমঙ্গল।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির রাহুগ্রাস সব জায়গাতেই। সাধারণরা এগোতে চায়, রাজনীতিকরা পিছিয়ে দেয়। অনিয়ম, দুর্নীতি আর শিক্ষিত রাজনীতিবিদরা যদি সাধারণ মানুষের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করত তাহলে আমাদের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপরে থাকত। যে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সেটাও ধরে রাখতে পারব কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।’
সাবেক এই মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, ‘দুর্নীতি হচ্ছে সর্বত্র। হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দুর্নীতিবাজরা উধাও হচ্ছেন, অথচ বিচার হচ্ছে না, সাজা হচ্ছে না। আরও যেন চুরি করা যায়, তার জন্যই নানা আয়োজন হচ্ছে।’
শিক্ষা ভবনে রোববার পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দুর্নীতির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নেয়ার পরামর্শ দেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে বিভিন্ন বিষয়ে যারা প্রতিবেদন দেন, সেই কর্মকর্তাদের ‘সহনশীল মাত্রা’ ঘুষ খাওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
ওই অনুষ্ঠানে নাহিদ বলেন, ‘স্কুলে খাম তৈরি করা থাকে, আপনার কাজ হলো আপনি গেলেন, গেলে আপনার খামটা আপনার হাতে ধরাই দিলে আপনি খাইয়্যা-দাইয়্যা তারপরে চলে আসবেন। আইস্যা রিপোর্ট দেবেন ঠিক আছে।’
Advertisement
ঘুষ প্রসঙ্গে নাহিদ আরও বলেন, ‘সব জায়গায় যে বলেছি অপচয়-দুর্নীতি রোধে আমরা কঠোর অবস্থান নেব এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স। এটা আমাদের বলতে হবে কিন্তু আমি ইডির (ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট) সভায় বলছি, আপনারা দয়া করে ভালো কাজ করবেন। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খাবেন, তবে সহনশীল হইয়্যা খাবেন। অসহনীয় হয়ে বলা যায় আপনারা ঘুষ খাইয়েন না, এটা অবাস্তব কথা হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এটি জাতির জন্য অশনিসংকেত। ঘুষের মাত্রা কোথায় পৌঁছালে এমন অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। একই মঞ্চে তিনি দুর্নীতিবিরোধী কথা বলেছেন, আবার সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তার এই বক্তব্যে রাষ্ট্রের ব্যর্থতাই প্রকাশ পেয়েছে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিচার নেই, তদন্ত নেই। আর এই কারণেই ঘুষ পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘খুন ঠেকাতে পারছে না বলেই তো খুনিকে বলতে পারি না, যেহেতু তুমি মানবে না, সেহেতু কম কম খুন করিও। এটি তো কোনো বিধান হতে পারে না।’
এএসএস/ওআর/বিএ