প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুয়াম দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ বলছে, গুয়ামে মধ্যম মাত্রার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিকল্পনা পর্যালোচনা চলছে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের অনুমোদন পেলেই চলতি মাসেই গুয়ামে হামলা চালানো হবে।
Advertisement
কেসিএনএ বলছে, ট্রাম্পসহ মার্কিন কর্তৃপক্ষের পারমাণবিক যুদ্ধের উন্মাদনা একটি প্রকৃত যুদ্ধের জন্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে হুমকি দেন। তিনি বলেন, যদি দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেয়া বন্ধ না করে তাহলে পিয়ংইয়ং এমন ক্রোধ, উন্মত্ততা এবং ক্ষমতার প্রয়োগ দেখবে যা আগে কখনো দেখেনি বিশ্ব।
ট্রাম্পের এই হুমকির কয়েক ঘণ্টার মাথায় গুয়ামে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার হুমকি এসেছে পিয়ংইয়ংয়ের কাছ থেকে। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির পর এ হুমকি দিয়েছে দেশটি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানো হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়। এসব হুমকি সাধারণত অস্পষ্ট থাকে। অতীতে গুয়ামের এই ঘাঁটিকে খুব কমই লক্ষ্য বানানো হয়েছে।
Advertisement
তবে এবার সরাসরি গুয়ামের ঘাঁটি লক্ষ্য বানিয়েছেন কিম জং উন। যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই ঘাঁটিতে দেশটির নৌবাহিনীর স্টেশন রয়েছে। তবে কিম জং উনের এই হুমকি গুয়ামের এক লাখ ৬০ হাজার বাসিন্দার কাছে আশ্চর্যের কিছু নয়।
ইউনিভার্সিটি অব গুয়ামের প্রেসিডেন্ট ও গুয়াম দ্বীপের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সাবেক প্রতিনিধি রবার্ট আন্ডারউড বলেন, সব সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে কিছু শক্তি তর্জন-গর্জন করে। আর সব সময় এর উপলক্ষ্য হয় গুয়াম।
ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন গুয়ামের বাসিন্দা এবং সেখানে বসবাস করবেন, তখন এটা অস্বস্তিকর কিন্তু অস্বাভাবিক নয়।’ বুধবার সকালের দিকে গুয়ামের গভর্নর এডি বাজা ক্যালভো ইউটিউবে এক ভিডিওতে দ্বীপের বাসিন্দাদেরকে চিন্তিত না হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধে উত্তর কোরিয়ার হামলা নিয়ে গণমাধ্যমের খবরে আমরা জেগে উঠেছি। এটাই তথাকথিত নতুন প্রযুক্তি যা গুয়ামকে লক্ষ্য বানাতে তাদেরকে সুযোগ দেয়।’
Advertisement
গভর্নর এডি বাজা ক্যালভো বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চত করতে আমি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ, রিয়ার অ্যাডমিরাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছি। আমি গুয়ামের জনগণকে আবারো আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমাদের এই দ্বীপ বা মারিয়ানার জন্য এই মুহূর্তে কোনো হুমকি নেই।’
তিনি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার কার্যক্রমের কারণে গুয়ামে হুমকির মাত্রায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এছাড়া প্রতিরক্ষামূলক বেশকিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সব ব্যবস্থাই সাজানো হয়েছে আমাদের দ্বীপ এবং জাতির সুরক্ষার জন্য।’
‘গুয়াম যুক্তরাষ্ট্রের মাটি ছাড়া কিছুই নয়। গুয়ামে কোনো হামলা অথবা হুমকির অর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হামলা অথবা হুমকি। উত্তর কোরিয়ার হুমকির পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছেন। গুয়ামের এই গভর্নর বলেন, হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, এই দ্বীপকে নিরাপদ রাখা হবে।
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ৪ হাজার মাইল পশ্চিমে এবং উত্তর কোরিয়ার দুই হাজার ২০০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই দ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম রণঘাঁটি। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যৌথ এই ঘাঁটিতে মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন বন্দর রয়েছে। কোরীয় উপদ্বীপ ও জাপানের ভূখণ্ডের ওপর মার্কিন স্পেশাল অপারেশন ফোর্স ও বোমারু বিমান পরিচালনায় বিশেষ ব্যবস্থা আছে এই দ্বীপে। অনায়াসেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে উত্তর কোরিয়াকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।
১৮৯৮ সালে মার্কিন-স্পেন যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর কাছে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ হারায় স্পেন। এরপর থেকেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সামরিক্ত শক্তিগুলোর নজরে পড়ে এই দ্বীপ।
১৯৪১ সালে পার্ল হার্বারে বোমা হামলার পর জাপানি বাহিনী দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপরে ব্যাপক সহিংসতা চালানো হয় সেখানে। কিছু ঐতিহাসিক বলছেন, জাপানের সামরিক বাহিনী এই দ্বীপের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষকে হত্যা করেছে।
আন্ডারউড বেলেন, ১৯৪৪ সালের ১০ জুলাই মার্কিন প্রচেষ্টায় গুয়াম স্বাধীনতা পায়। গত মাস এই দ্বীপ ৭৩তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে। উচ্চ বেকারত্ব থাকলেও সামরিক কার্যক্রম ও পর্যটন স্বর্গ হয়ে উঠা গুয়ামের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে। গুয়ামের বাসিন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন গুয়ামের বাসিন্দারা।
এসআইএস/পিআর