খেলাধুলা

তামিম ইকবালের অন্যরকম এক গল্প

‘শততম টেস্ট’ বলে কথা। সংখ্যা তত্ত্বেই একটা অন্যরকম ভাব। টিম বাংলাদেশের মাঠের পারফরম্যান্স যেমনই হোক না কেন, কাল থেকে কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে যে টেস্ট শুরু হতে যাচ্ছে, সে ম্যাচের আবেদন তাই ভিন্ন। ঘুরে ফিরে কথা একটাই, কারণ এটা টাইগারদের ‘শততম টেস্ট’। এ ম্যাচকে ঘিরে ভক্ত, দর্শক ও সমর্থকদের উৎসাহ-আগ্রহ, উদ্দীপনা অনেক বেশি। ভারত মহাসাগরের পাড়ে সুদূর কলম্বোয় বসে আঁচ করা যাচ্ছে দেশে এ টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে একটা অন্যরকম আমেজ। ভালো লাগা। রোমাঞ্চ ও পুলক জাগানো অনুভূতি। রীতিমতো উৎসব উৎসব ভাব। এক কথায়, দেশের মানুষ তাকিয়ে এ ম্যাচের দিকে। আগামী কাল ১৫ মার্চ থেকে পি সারা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার সাথে যে টেস্ট শুরু হচ্ছে, তা নিয়ে আগ্রহ, উৎসাহ- উদ্দীপনা ও ভালো করার তাগিদ ক্রিকেটারদের মনেও। বাংলাদেশ দলের যে ১৬ জন ক্রিকেটার এখন কলম্বোর নামি পাঁচ তারকা হোটেল ‘তাজ সমুদ্র’ তাদের সবার মনেই একটা ভিন্ন রকম অনুভূতি। তবে একজনার অনুভূতি আর সবার চেয়ে ভিন্ন। তার মনেও আছে ভালো লাগার পরশ। পুলক জাগোনো অনুভূতি। সাথে মিশে আছে অন্যরকম আবেগ। ভালো লাগা ও সুখস্মৃতি। খানিক মনঃকষ্টও। তাই আর যে কারো তুলনায় নস্টালজিক তামিম ইকবাল। আবেগটাও বেশি। তামিম ইকবালের আবেগ অন্যদের চেয়ে বেশি কেন? খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাই না? তাহলে শুনুন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টে যে ১৬ জন দলে, তাদের কারো সাথেই অভিষেক টেস্টের কোনো ব্যক্তিগত, পারিবারিক স্মৃতি জড়িত নেই। কারো পূর্বপুরুষ, বাবা, চাচা, মামা কিংবা বড় ভাই ১৭ বছর আগে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট  খেলেননি। দলেও ছিলেন না। কিন্তু তামিমের পূর্বপুরুষ তথা চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারের সাথে অভিষেক টেস্ট অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। তামিম ইকবালের অভিষেক টেস্টের সুখস্মৃতি আর যে কারো চেয়ে সতেজ ও সজীব। কারণ চাচা আকরাম খান ছিলেন ওই টেস্টে বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য। আছে। চাচা আকরাম খান অভিষেক টেস্ট খেলেছেন, আর তার প্রয়াত পিতা ও আকরাম খানের বড় ভাই ইকবাল খানের সাথে বসে ২০০০ সালের নভেম্বরে হওয়া সে টেস্ট দেখেছেন তামিম।তার কাছ থেকেই আজ জানা হলো অভিষেক টেস্টে বন্দরনগরীর কাজীর দেউরির বাড়ী ছিল রীতিমতো উৎসবের বাড়ি। তামিমের কাছে বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক স্মৃতি অনেকটাই নিজ পরিবারের সুখস্মৃতি। তাইতো আজ কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে যখন অভিষেক টেস্টের কথা কেমন মনে আছে, জানতে চাওয়া হলে তামিম ইকবালের চটপট জবাব, ‘বলেন কি, অভিষেক টেস্টের সব স্মৃতিই আমার খুব ভালো মনে আছে। মনে থাকবে না, আমাদের পরিবারের অন্যতম সদস্য আমার আব্বুর ছোট ভাই ও আমার চাচা আকরাম খান যে ওই ম্যাচ খেলেছেন। তাই অভিষেক টেস্টের সাথে আমার শুধু না, আমাদের গোটা পরিবারের সবার স্মৃতি জড়িয়ে আছে।’ তামিম অভিষেক টেস্টের স্মৃতি কেমন ধারণ করে আছেন, শুনলে অবাক হবেন। যারা খুব বেশি পরিসংখ্যান নিয়ে ঘাটাঘাটি করণ, তারাই কেবল হয়তো ওই পরিসংখ্যান মনে রাখবেন। কিন্তু তামিমের ঠিক একটি চমৎকার পরিসংখ্যান মনে আছে। তার চাচা বর্তমান বোর্ড পরিচালক আকরাম খান অভিষেকে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ছক্কাটি হাঁকিয়েছেন। তামিমের তা খুব ভালো মনে আছে। আজ পি সারা স্টেডিয়ামে নিজ ড্রেসিং রুমের সামনে দাঁড়িয়ে জাগো নিউজকে ঐ স্মতির কথা শোনাতে গিয়ে তামিম যেন আবেগতাড়িত হয়ে উঠলেন। এমনভাবে অভিষেক টেস্টের স্মৃতি চারণ করলেন, যেন সব ঘটনা তার মনের কম্পিউটারে সাজানো আছে। এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলেন, ‘সব কথেই মনে আছে। পরিষ্কার মনে পড়েছে অভিষেক টেস্টের কথা। আমার চাচা আকরাম খান খেলছিলেন। আমরা সবাই খুব এক্সাইটেড ছিলাম। সবার মনে অন্যরকম রোমাঞ্চ কাজ করছিল। পরিবারের প্রতিটি সদস্যর মাঝে ছিল উৎসব উৎসব আমেজ। বলতে পারেন আমাদের পরিবারের জন্য সেটা ছিল উৎসবের দিন। যেন ঈদের দিন। ঈদের দিন যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে নতুন কাপড় পড়ে নামাজ পড়তে যাওয়া । তারপর সবাই মিলে এক সাথে ঘরোয়া পরিবেশে খাবার খাওয়া। ঠিক অভিষেক টেস্টের দিনও ছিল তেমন।’‘তখন আমার আব্বুও (আকরাম খানের আপন বড় ভাই ইকবাল খান) ছিলেন। আমরা সবাই মিলে সকাল থেকে সিরিয়াস। কেউ অন্য কোথাও যায়নি। অন্য কোন কাজেও ব্যস্ত থাকেনি। সবার চোখ ছিল টিভিতে। কখন খেলা শুরু হবে? একদম টসের আগে থেকে গোটা পরিবার বসে গেল টিভির সামনে। আমার চাচা (আকরাম খান) একটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। যেটা ছিল টেস্টে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানেরও প্রথম ছক্কা। সেই ছয় হাঁকানোর মুহূর্তটি মনে গেঁথে আছে। মোদ্দা কথা, প্রথম টেস্টের স্মৃতি আর আমার চাচার হাঁকানো ছক্কার স্মৃতিটা  আমার মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। ওটা সব সময়ই সজীব। সতেজ। আমাদের পরিবারের জন্য সেটা ছিল একটা গৌরবের ব্যাপার। একটা উৎসবের উপলক্ষ্য। প্রথম টেস্ট ছিল একটা স্পেশাল কিছু হয়েই ছিল। এখনো আছে।’এ তো গেল অভিষেক টেস্টের সুখস্মৃতি। চট্টলার খান পরিবার তথা তামিম ইকবারে পরিবারের সাথে বাংলাদেশের গত ১৭ বছরের টেস্ট যাত্রার আরও একটি পর্ব জড়িত। আজ থেকে ঠিক এক যুগ আগে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ যখন প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায়, সেখানেও সম্পৃক্ত ছিল তার পরিবার। ২০০৫ সালের ৬-১০  জানুয়ারি চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হওয়া টেস্টে বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল ২২৬ রানে।তামিমের আপন বড় ভাই নাফিস ইকবাল সে ম্যাচে ছিলেন টিস বাংলাদেশের ওপেনার। প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রানের বড় ইনিংস সাজানো বাংলাদেশের হাফ সেঞ্চুরিয়ান নাফীস ইকবাল (১৫৭ মিনিটে ১২২ বলে ৫৬)। সেই খান পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য তামিম ইকবাল আগামীকাল ১৫ মার্চ টেস্টে আরও একটি অন্যরকম স্মরণীয় ফলকের সামনে দাঁড়িয়ে। তাই তামিমের আবেগ আর যে কারো চেয়ে বেশি।  তাই শততম টেস্ট ঘিরে তার মনেও অন্যরকম পুলক। রোমাঞ্চ। আবার চাপা দুঃখও। ইস, আব্বা যদি এ টেস্ট দেখে যেতে পারতেন। নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন। তাই জাগো নিউজের সাথে কথা বলার সময় অলক্ষ্যে তামিমের তার প্রয়াত পিতা ইকবাল খানের কথা মনে হয়ে থাকবে। তামিমের এ ম্যাচ ভাবনাও ভিন্ন, ‘আমার মূল লক্ষ্য একটাই এমন কিছু করা বা স্মরণীয় সাফল্যে গেঁথে রাখা যাতে ২০০ টেস্টের সময় যেন সবাই বলে শততম টেস্টে ওই হয়েছিল। ১০০ নম্বর টেস্ট ম্যাচটি ছিল সাফল্যে গাঁথা। সেটা করতে পারলেই মনে হয় শততম টেস্টের স্বার্থকতা থাকবে। আমি একা নই, সবাই মনেপ্রাণে চাচ্ছি যাতে ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে ১০০ নম্বর টেস্টকে অবিস্মরণীয় করে রাখা যায়। আমার নিজের টার্গেট, সব সময় যেমন থাকে তেমন। সাধ্যমতো চেষ্টা করবো দলকে কিছু দিতে। যদি বড় ইনিংস দিতে পারি তাহলে খুব ভালো লাগবে। দলেও উপকার হবে। আমার ক্যারিয়ারের জন্যও ভালো হবে।’ তামিমের আশা কি পূর্ণ হবে? অভিষেক টেস্টে চাচার ছক্কা তার মনে গেঁথে আছে। প্রথম টেস্ট বিজয়ে বড় ভাইয়ের হাফ সেঞ্চুরি আছে। পি সারায় তামিম শতরান করলে চট্রগ্রামের কাজীর দেউরির বিখ্যাত খান পরিবারের শততম টেস্ট থাকবে চিরস্মরণীয় হয়ে। এআরবি/এনইউ/এমএস

Advertisement