শুরুতে মাত্র ২০ টাকার বিনিময়ে ছবি তোলা ছেলেটিকে আজ বাংলাদেশের আধুনিক ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জনক। বলছিলাম প্রখ্যাত ওয়েডিং ফটোজার্নালিস্ট এবং ‘ওয়েডিং ডায়েরি’র সিইও প্রীত রেজার কথা। বোনের শাড়ি পরা ছবি তুলতে তুলতে ফটোগ্রাফির প্রেমে পড়া। বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করে পৌঁছেছেন সিন্ধুতে। প্রথম কোন বাংলাদেশি ফটোগ্রাফার হিসেবে তিনি হয়েছেন ক্যামেরা ব্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। জাহিদ রেজা থেকে প্রীত রেজাপুরো নাম মুহাম্মদ জাহিদ রেজা প্রীত। যখন জনপ্রিয় হতে শুরু করলেন, তখন কেউ জাহিদ, কেউ রেজা আবার কেউ বা ডাকত প্রীত বলে। তখন কাছের বন্ধু জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী জয় শাহারিয়ারের উপদেশে ও তার দেয়া নামেই পুরো নাম বদলে তিনি প্রীত রেজা হয়ে গেলেন।ফটোগ্রাফিতে হাতেখড়ি অনেক পিছুটান, নানা বাধা অতিক্রম করে তিনি আজ প্রীত রেজা। বোনের কেনা ক্যামেরায় বোনের শাড়ি পরা ছবির ফটোগ্রাফার ছিলেন তিনি। তখন থেকেই ছবি তোলার প্রতি প্রেম জাগে। তারপর ঢাকায় চলে আসার পর ফটোগ্রাফিতে একটু বেশি আগ্রহ জন্মায়। তিনি যখন সিটি কলেজে পড়তেন তখন সেখানে বড় সাইনবোর্ডে লেখা ছিলো ‘চঞ্চল মাহমুদ ফটোগ্রাফি’ এখানে ফটোগ্রাফি শেখানো হয়। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় তখন সেখানে ফটোগ্রাফি শেখার মত টাকা ছিল না। তারপর হতাশ হলেও হাল ছাড়েননি। পরে পত্রিকায় ‘৫০০ টাকার বেসিক ফটোগ্রাফি শিখুন’ বিজ্ঞাপন দেখে আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। সেই ৫০০ টাকার কোর্স দিয়েই ফটোগ্রাফি শেখা শুরু।কাজের শুরুপ্রথম ক্যামেরা কিনেছিলেন টাকা ধার করে। যেহেতু এই পেশা অনেক ব্যয়বহুল সে কারণে প্রথমে প্রিন্টসহ ২০ টাকায় ছবি তুলতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিভিন্ন উৎসবে ক্যাম্পাসে পোর্ট্রেট ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন ‘এখানে ২০ টাকায় ছবি তোলা হয়’ ব্যানারে।বিয়ের ছবিই গন্তব্যপ্রথমে বিভিন্ন পত্রিকায় আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করতেন। সেখান অনেক সম্মান পেলেও অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছ্বলতা ছিল না। তাই তখন টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তুলতেন। প্রথমে এ নিয়ে সবাই পরিহাস করতো। এমনকী বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত খেতে আসা পরিচিতরা না চেনার ভ্যান করতো। অনেকেই বলতেন, ‘এই ছেলেটা এত ভালো ছবি তোলে, তাহলে বিয়ের ছবি তোলার কী দরকার?’ তখন মনে জেদ আসে, যেভাবেই হোক তিনি এই পেশায় প্রতিষ্ঠিত হবেন। এছাড়া ওয়েডিং ফটোগ্রাফির প্রতি সামাজিক ধারণা বদলে দিতে ও দায়বদ্ধতা থেকেই বিয়ের ছবিতে আটকে আছেন।সফলতার পেছনের গল্পখুব সহজে তিনি এতদূর আসেননি। যতদূর এসেছেন তার জন্য প্রয়োজন হয়েছে সততা আর পরিশ্রমের। প্রীত রেজা বলেন, ‘আমি গাধার মত পরিশ্রম করতে পারি। ২৪ ঘণ্টা আমার কাছে কম মনে হয়। তাছাড়া এই কাজটাকে আমি উপভোগ করি। আমি নিজেকে নতুন টেকনোলজির সঙ্গে আপডেট করেছি। এছাড়া স্বপ্ন দেখার উপর যেহেতু ট্যাক্স-ভ্যাট নেই; তাই আমি বড় বড় স্বপ্ন দেখতাম। তিনি মনে করেন, ‘আপনি যদি চাঁদ জয়ের স্বপ্ন দেখেন তবে আপনি এভারেস্ট জয় করতে পারবেন। আর আপনার স্বপ্ন যদি হয় তাজমহল দেখার, তবে আপনি যাত্রাবাড়ীর জ্যামেই আটকে থাকবেন। তাই বড় বড় স্বপ্ন দেখতে হবে।’অনুপ্রেরণাতিনি নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা। ছোটবেলা থেকে প্রায় সব কাজে অনেক ‘না’ শুনেছেন। সে কারণে প্রথমে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়াটা করেন। তবে তার বোন, বন্ধু জয় এবং ফ্যামিলির কাছ থেকে অনেক খারপ সময়ে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তিনি কাউকে সরাসরি অনুসরণ করেননি। একেক জনের একেক বিষয় তার ভালো লাগত। সেখান থেকে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করেছেন।টিভি-রেডিওতে ছবির কথাটিভি-রেডিওতে ছবির কথা বলার পরিচিত মুখ তিনি। জীবনে সব কাজে ‘না’ শুনতে শুনতে টিভি-রেডিও গিয়ে ‘আপনাকে দিয়ে হবে’ কথাটা মানুষকে শোনাতে চেয়েছেন। এছাড়া মানুষের কাছাকাছি ফটোগ্রাফি নিয়ে যেতেই টিভি-রেডিওকে বেছে নিয়েছেন।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাপ্রীত রেজা মানুষকে স্বপ্ন দেখতে চান। এছাড়া ফটোপ্রেনার্স নামের একটা প্রজেক্ট শুরু করেছেন। যার কো-ফাউন্ডার সজিব এম খায়রুল ইসলাম। যার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলায় সুবিধাবঞ্চিত একজনকে ফটোগ্রাফার হিসেবে তৈরি করা হবে। এছাড়া দেশের বাইরে আরো বেশি কাজ করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি মনে করেন, ‘আমাদের দেশ থেকে একসময় ফটোগ্রাফার রপ্তানি হবে।’এসইউ/পিআর
Advertisement