গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য। প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাব। দক্ষ কৃত্রিম প্রজননকারী শ্রমিকের অপর্যাপ্ততা এবং মিল্কভিটার মূল্যবৃদ্ধি না করার কারণে লোকসানে সিরাজগঞ্জের গো-খামারিরা। বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড (মিল্কভিটা) ও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস এসব সমস্যার কথা স্বীকার করলেও সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না তারা।তথ্যানুসন্ধান ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়িতে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা (মিল্কভিটা) স্থাপিত হয়। এরপর থেকে এখানে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠে শত শত গরুর খামার। বাঘাবাড়ি মিল্কভিটায় দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার অধীনে ৯৬ হাজারসহ বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার গবাদিপশু রয়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। এ অঞ্চলের আট শতাধিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রাথমিক সমিতির দেড় লক্ষাধিক গবাদিপশু প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ লিটার দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি দেশের মাংসের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করছে। বর্তমানে ক্রমাগতভাবে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গবাদিপশুর জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গবাদিপশুর মৃত্যু, কৃত্রিম প্রজননকারীর অভাব, খামারে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক না পাওয়ার কারণে লোকসানের মুখে পড়েছেন গো-খামারিরা। এ বিপুল পরিমাণ পশুচিকিৎসা ও কৃত্রিম প্রজননের জন্য রয়েছেন মিল্কভিটা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মোট ৮ জন চিকিৎসক। এ অঞ্চলে গবাদিপশু পালনে বর্তমান সময়ে প্রধান সমস্যা পশুচিকিৎসক ও কৃত্রিম প্রজননকারীর অভাব। সঠিক সময়ে গবাদিপশুকে চিকিৎসা ও কৃত্রিম প্রজননে ব্যর্থতার কারণে গাভীর মৃত্যু হচ্ছে। এজন্য ক্রমাগত লোকসান হওয়ায় এ শিল্পের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন খামারিরা। ফলে বেকার হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন গো-খামারে কাজ করা শ্রমিকরা।খামারি আজগর আলী বলেন, এক লিটার দুধের দাম ৩০-৩২ টাকা। যে হারে খৈল ভুষির মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে দুধের দাম ওঠে না। এ কারণে লোকসানের মুখে খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।খামারি আবু তাহের বলেন, বর্তমানে গো-খাদ্যের যে দাম তাতে গরু পালা খুব সমস্যা। ৩০-৩২ টাকা লিটার দুধের দাম। আর ২৫ টাকা কেজি গো-খাদ্যের দাম। আমার ১২/১৪টা গরু। খামারে কাজের জন্য দুজন কর্মচারী আছে। দুজন কর্মচারীর বেতন প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা। তাতে দুধ বিক্রি করে গরুর খাদ্যের দামই ওঠে না লাভ হওয়া তো দূরের কথা।বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের (মিল্কভিট) পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল হামিদ লাভলু বলেন, বিগত জোট সরকার ও খালেদা জিয়ার সরকার আসার পরে তারা মিল্কভিটার গলাচিপে ধরে মিল্ক ভিটাকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে তুলে দেয়। বিগত যে কমিটিগুলো আসে তারা মিল্কভিটাকে একটি লোকসান প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত করে। আমরা যখন দায়িত্ব নিলাম তখন মিল্কভিটা ছিল লোকসানে। এখন মিল্কভিটায় আমরা ৫৫ কোটি টাকা লাভ করেছি। বিগত সময়ে ডাক্তার নিয়োগ না দিয়ে তারা লেবার নিয়োগ দিয়ে মাথাভারি প্রশাসক করে গেছে। আমরা আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা নিয়েছি। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আকতারুজ্জামান বলেন, আপাতত আমরা আমাদের মাঠকর্মী ও চিকিৎসক যারা আছেন তাদের দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে অারেকজন ভেটেরিনারি সার্জন পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আর সমস্যা থাকবে না।এমএএস/পিআর
Advertisement