ভারতের গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই সম্মেলনে মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার এক খবরে জানানো হয়েছে, ওই বৈঠকে তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে আশ্বাস দিয়েছেন মোদি। রোববার সকালে এক টুইট বার্তায় শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন মোদি। ব্রিকস এবং বিমস্টেক সম্মেলনে হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও বাংলাদেশকে আলাদা গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন মোদি। আর এ কারণেই শেখ হাসিনা গোয়ায় পৌঁছানোর পর পরই বাংলায় টুইট করে মোদি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার আতিথ্য গ্রহণ করায় আমি সম্মানিত। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক মজবুত করার জন্য আপনার ভূমিকাকে ধন্যবাদ জানাই।’রোববার রাতেই মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন মোদি এবং হাসিনা। বৈঠকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতা শিগগিরই কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মোদি। নিরাপত্তা নিয়ে সহযোগিতা ও সন্ত্রাস দমনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ায় হাসিনাকে সাধুবাদ জানান তিনি।এর আগে ব্রিকসের অন্তর্ভূক্ত দেশগুলির সঙ্গে বিমস্টেকভুক্ত রাষ্ট্রগুলির বৈঠকে নিজের বক্তৃতায় সন্ত্রাসবাদের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে গুলশান হত্যাকাণ্ডের পর এই প্রথম ভারতে সফর করলেন শেখ হাসিনা। বক্তৃতায় তিনি বলেন, বিমস্টেক অথবা ব্রিকস যেকোনো সংগঠনের জন্যই সন্ত্রাসবাদ নির্মুল করাটাই প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সন্ত্রাসবাদ এবং হিংসাত্মক চরমপন্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলিকে আহ্বান জানান তিনি। সন্ত্রাসবাদের মস্তিষ্ক, আর্থিক জোগানদার, অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করতে হবে। ব্রিকস-এর ধনী দেশগুলি যেন বিমস্টেকের অপেক্ষাকৃত কম সম্পদশালী দেশগুলির হাত ধরে, সেই আহ্বান জানিয়ে হাসিনার বলেন, ‘এই দুই গোষ্ঠী যদি কড়া হাতে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা না করে তবে স্থায়ী উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়।’উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। কূটনৈতিক সূত্রের খবরে জানানো হয়েছে, তিস্তার পানি চুক্তি নিয়েও তাগাদা দিয়েছেন হাসিনা। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার আগেই, অর্থাৎ আগামি বছরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এই চুক্তিটি সম্পাদন করতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। বাংলাদেশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তিস্তা আর শুধু পানিচুক্তি নয়, বাংলাদেশের জনমানসের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে তিস্তা। হাসিনার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও জানানো হয়েছে নয়াদিল্লিকে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতকে লাগাতার সহযোগিতা করে আসছেন হাসিনা। বাংলাদেশের মাটিতে থাকা ভারতবিরোধী জঙ্গি ঘাঁটিগুলি নির্মূল করা হয়েছে। প্রতিদানে তিস্তা চুক্তি চায় বাংলাদেশের মানুষ।সূত্রের খবরে আরো বলা হয়েছে, মোদি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির ঐকমত্য তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে গত বছর বাংলাদেশে গিয়ে স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তখন সেখানে মমতা বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের পাশে রয়েছেন। তিস্তার ক্ষেত্রেও মমতার আপত্তিগুলি আলোচনায় মিটিয়ে ফেলে যাতে দ্রুত চুক্তিটি নিয়ে বাস্তবায়নের পথে হাঁটা যায় সে ব্যাপারে হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছেন মোদি।টিটিএন/আরআইপি
Advertisement