আবারো বিতর্কে মুখোমুখি হলেন ট্রাম্প ও হিলারি। দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে একে অপরের মুখোমুখি হলেন প্রধান দুই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। খবর বিবিসির।এর আগের বিতর্কের জরিপে জয়ী হয়েছিলেন হিলারি। রোববার দ্বিতীয় বারের মত মিসৌরির সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছেন হিলারি ও ট্রাম্প। সম্প্রতি এই বিতর্কের আগেই নারীদের নিয়ে ট্রাম্পের ২০০৫ সালে তৈরি একটি ভিডিও টেপটি প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ট্রাম্পকে বলতে শোনা গেছে, সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সুন্দরী নারীরা তাকে আকৃষ্ট করে।ওই ভিডিওতে টেলিভিশন উপস্থাপক বিলি বুশকে উদ্দেশ করে ট্রাম্পকে বলতে শোনা গেছে, ‘তুমি যখন একজন তারকা তখন নারীদের সঙ্গে তুমি যা খুশী তাই করতে পারবে। তাদের ইচ্ছামত নিজের কাছে টানতে পারবে।’এই ভিডিও টেপ ফাঁস হওয়ার পর থেকেই বেশ চাপে আছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান বেশ কয়েকজন নেতার সমর্থন হারিয়েছেন তিনি। ভোট দেবেন না বলে অনেক নেতাই নিজেদের সমর্থন ফিরিয়ে নিয়েছেন। তবে ওই ভিডিও সম্পর্কে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনায় মোটেও গর্ববোধ করেন না। তবে তার মতে, ইতিহাসে বিল ক্লিনটনের মত নারীদের যৌন হয়রানীকারী এমন আর কোনো রাজনীতিবিদ নেই। তিনি আরো বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ইমেইল তদন্তের জন্য বিশেষ প্রসিকিউটর নিযুক্ত করবেন আর তখন হিলারিকে জেলে যেতে হবে। বিতর্কের প্রথমেই স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কথা বলেন এই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ওবামা প্রশাসন ৯০ ভাগ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে। আমি এটাকে শতভাগে নিয়ে যেতে চাই। স্বাস্থ্য সেবা আরো উন্নত করতে ওবামাকেয়ারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন হিলারি। তিনি বলেন, প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় রয়েছে। এদিকে, ট্রাম্প বলছেন, ওবামাকেয়ার কোনো কাজেই আসেনি। এটা একেবারেই বাজে একটা স্বাস্থ্য বিমা। আর এটা খুব ব্যয়বহুল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মুসলিমদের নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই না সিরিয়া থেকে হাজার হাজার মুসলমান আমাদের দেশে আসুক। কারণ আমি জানি আমাদের প্রতি তাদের কোনো মূল্যবোধ নেই। আমাদের দেশকে তারা মোটেও ভালোবাসে না।’এদিকে, হিলারি বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা মুসলিমদের মনে ঘৃণা সৃষ্টি করছে। তিনি চাইছেন মুসলিমদের সঙ্গে আমাদের বড় ধরনের বিবাদ তৈরি হোক। ট্রাম্প হিলারিকে কটাক্ষ করে বলেছেন, হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে আমরা বহু বহিরাগত অবৈধ অপরাধীদের দেখেছি। এটাই যথেষ্ট। এক প্রশ্নের জবাবে হিলারি বলেন, ‘আমি এমন কাউকে এদেশে প্রবেশের অনুমতি দেব না যে আমাদের দেশের জন্য হুমকি হবে।’ট্রাম্পকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য সাহায্য করছে রাশিয়া। এমনটা উল্লেখ করে হিলারি বলেন, কোনো বিদেশী শক্তি আমাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে বা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছে এমন ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে নেই।হয়তো ট্রাম্প পুতিনের প্রশংসা করেছেন বলেই এটা হয়েছে। আর তার তো রুশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জোট রয়েছে। তবে তিনি আমাদের কাছে কিছু গোপনের চেষ্টায় নিজের আয়কর বিবরণী প্রকাশ করেননি বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি সরকারি অডিটের সময় তার আয়কর বিবরণী প্রকাশ করবেন। আর এটা করতে পারলে তিনি গর্বিত হবেন বলেও মন্তব্য করেছেন।দুই দলের প্রার্থীকেই মুখোমুখি বিতর্কে তীব্র বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন এমন বিতর্ক খুব একটা চোখে পড়ে না। হিলারি ট্রাম্পের সম্পর্কে বলেছেন, ট্রাম্প নিজের বক্তব্যের মাধ্যমেই নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। তিনি নারীদের সম্পর্কে যা ভাবেন সেসব মন্তব্যই তার মুখে শোনা যায়। এদিকে, ট্রাম্পও বিল ক্লিনটনের বিবাহ বর্হিভূত নারী আসক্তির বিষয়টি তুলে ধরে হিলারিকে কটাক্ত করতে ভোলেন নি। শুধু তাই নয় ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহারের কারণে হিলারিকে জেলে ঢুকানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। চূড়ান্ত নির্বাচনের আগে হিলারি এবং ট্রাম্প আরো একটি বিতর্কে অংশ নেবেন। দ্বিতীয় বারের এই বিতর্কে ট্রাম্প জিততে না পারলে তার জনপ্রিয়তা আরও কমে যাবে ফলে এর চাপ পড়বে আসন্ন নির্বাচনে। এই বিতর্কে কে এগিয়ে যাবে সেটাই এখন দেখার পালা।টিটিএন/এবিএস
Advertisement