চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি (২০১৪-১৫) অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) ঘোষিত মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।কেন্দ্রীয় ব্যাকের মুদ্রানীতি ঘোষণার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঋণ সরবারহ ও মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাঙ্খিত জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি অর্জনের সরকারকে সহায়তা করা। কিন্তু ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ, জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ও মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ যে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা অর্জন বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।ঘোষিত মুদ্রানীতিকে গতানুগতিক বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আর তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এ মুদ্রনীতি বাস্তবায় অসম্ভব। বৃহস্পতিবার অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রনীতি ঘোষণার পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ার তারা এসব কথা বলেন।রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা সত্তেও ঘোষিত প্রথমার্ধের গত(জুলাই-ডিসেম্বর’১৪) ছয় মাসের ঘোষিত মুদ্রানীতির কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ হয়নি। আর অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি আগামী ছয় (জানুয়ারি-জু ‘১৫) মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ ছিলো ১৪ শতাংশ। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রার যোগান ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কৃষি ঋণের জন্য সুদহার ১৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ শতাংশ করা হয়েছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগোনিউজকে বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঘোষিত এই মুদ্রানীতি ইতিবাচক কোনো প্রভাব পরবে না। কারণ এটি একটি গতানুগতিক মুদ্রানীতি। এছাড়াও প্রস্তাবিত প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জন করা কঠিন হবে। কারণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কিন্তু বর্তমানে রাজনেতিক অচলাবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।তিনি বলেন, বেসকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়িয়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে এটা ভালো। কিন্তু ঋণ প্রবাহ আরও বাড়ানো ইাঙ্গত দেওয়া উচিত ছিল। তবে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা বাস্তবায়ন অসম্ভব বলে তিনি জানান।সাবেক এ গভর্নর আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারন সরবরাহ ব্যাবস্থা ভালো ও বিনিয়োগ পরিস্থিতী পর্যপ্ত না থাকলে সাধাণত মূল্যস্ফীতি কমে না।নতুন মুদ্রানীতি সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বি এস মির্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রাজনৈতিক পরিবেশেও প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন হয়নি। আর অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শেষ ৬ মাসের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন অনেক কঠিন হবে। তিনি এ নীতিকে শুধুই ইন্ডিকেটর হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ নীতিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশের যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে তা সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে। বেসরকারি খাতে ঋণ যে প্রবাহ ধরা হয়েছে তাও বাস্তবায়ন অসম্ভব।সম্প্রতি ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পুনর্গঠণে যে নীতিমালা চুড়ান্ত করা হয়েছে এটিকে রং সিগন্যাল উল্লেখ করে মির্জা আজিজ বলেন, এটি সম্পূর্ণ নৈতিকতা বিরোধী।তিনি বলেন, এ ধরণের ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে বিশেষ খাতকে অথবা বড় কোনো বিপর্যয়ে এমন ঋণকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ঢালাওভাবে এভাবে সুবিধা দেওয়া ঠিক হয়নি। এতে করে ভালো ঋণ গ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত হবে।এসআই/এআরএস
Advertisement