তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। স্ব-শরীরে উপস্থিত না থেকেও ছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। টেস্ট মর্যাদার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে শেরে বাংলার মিডিয়া বিল্ডিংয়ে অস্থায়ী তাবু খাটিয়ে যে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে, তার গায়ে অভিষেক টেস্টের কিছু ছবি লাগানো ছিল। যার প্রথম ছবিটিই প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের। অভিষেক টেস্টের প্রতিপক্ষ ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে টস করা অবস্থায় দুর্জয়ের হাসিমুখের ছবি। এছাড়া প্রথম টেস্ট স্কোয়াডের অফিসিয়াল ছবিতেও আছে অধিনায়ক দুর্জয়ের অস্তিত্ব।
Advertisement
কিন্তু কোথাও মিললো না বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার দুই নেপথ্য কারিগর সৈয়দ আশরাফুল হক ও সাবের হোসেন চৌধুরীর ছবি। ছবি টানানো বহুদূর, অভিষেক টেস্টের সাজানো-গোছানো ছিমছাম অনুষ্ঠানের গায়ে ‘চাঁদের কলঙ্ক’ হয়েই থাকলো একটি বিষয়; তাহলো কেউ একবারের জন্যও টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার দুই নেপথ্য কারিগর বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও বোর্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হকের নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করলেন না।
বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী আওয়ামীলীগ করেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন। ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলন ও হাজারো সংগ্রামী জনতার রক্তস্নাত বিপ্লবে শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগের পতনের পর অন্যসব আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য মত সাবের হোসেন চৌধুরীও লোক চক্ষুর অন্তরালে। তাকে আমন্ত্রণ জানানোর মত আসলে রাজনৈতিক অবস্থাও নেই এখন; কিন্তু বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হককে তো রাখা যেত। তিনি তো ঢাকাতেই থাকেন। আছেনও।
আর সবচেয়ে বড় কথা আশরাফুল হক সরাসরি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। তাকে আওয়ামীলীগার বলে চিহ্নিত করাও কঠিন। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তিতে আশরাফুল হকের অবদান অনেক। খেলোয়াড়ী জীবন থেকেই ইমরান খান, আসিফ ইকবালের মত নামী ক্রিকেটারের সাথে বন্ধুত্ব ছিল সৈয়দ আশরাফুল হকের।
Advertisement
খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে আশরাফুল ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে কাজ শুরু করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহীর মত গুরুত্বপূর্ণ পদেও আসীন হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আশরাফুল হকের নেটওয়ার্কও ছিল দারুন। ক্রিকেট বিশ্বে সংগঠকদের তালিকায় ওপরের দিকেই ছিল তার নাম। এক নামে তাকে চিনতো সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেট কর্মকর্তারা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সৈয়দ আশরাফুল হকের মাধ্যমেই তখনকার আইসিসি প্রধান ভারতের জগমোহন ডালমিয়ার সাথে সু-সম্পর্ক তৈরি হয় বিসিবির। বাঙালি না হয়েও জগমোহন ডালমিয়া কলকাতায় অবস্থান করতেন এবং আইসিসি সভাপতি হওযার আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গ ক্রিকেট এসোসিয়েশনের (সিএবি) প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
জগমোহন ডালমিয়ার সাথেও আশরাফুল হকের নেটওয়ার্কটা এসিসিতে থাকতেই তৈরি হয়। বোঝাই যায়, কৌশলী আশরাফুল হক জগমোহন ডালমিয়াকে শুরুতেই বোঝাতে সক্ষম হন, বাংলাদেশে ক্রিকেট খুব জনপ্রিয়। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটকে খুব ভালবাসে এবং এ দেশের ক্রিকেট সম্ভাবনাও আছে যথেষ্ঠ। তাই ডালমিয়া শুরু থেকেই বাংলাদেশকে টেস্ট মর্যাদা দেয়ার ব্যাপারে নমনীয় ছিলেন।
বললে বাড়াবাড়ি হবে না, ডালমিয়ার ব্যক্তিগত ইচ্ছে, উৎসাহ এবং তার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় শক্তিগুলোর অকুন্ঠ সমর্থনেই বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পায়। আর সৈয়দ আশরাফুল হকও অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বোর্ডের অকুন্ঠ সমর্থন আদায়ের কাজ করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক অনুকুল বলয় তৈরি করে জগমোহন ডালমিয়াকে বাংলাদেশের প্রতি আরও দূর্বল করে ফেলার কাজটিও করেন আশরাফুল হক।
Advertisement
আজকের বিসিবির রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ডালমিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো যেত অনায়াসে। বর্তমান প্রজন্ম হয়ত সেভাবে জানে না, কঠিন সত্য হলো বাংলাদেশ যখন টেস্ট মর্যাদা লাভ করে তখন এ দেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই সেভাবে বিস্তার লাভ করেনি। কোনো রকমে ৩-৪ দিনের জাতীয় লিগ শুরু হয়েছিল তার ২ বছর আগে। ওইরকম অবস্থায় টেস্ট মর্যাদা লাভ ছিল অনেকের চোখে বিস্ময়! আর সেই ম্যাজিক্যাল কাজটি সম্পাদনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হকের।
কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানে তার নামটিও উচ্চারিত হয়নি। জানা গেছে টেস্ট মর্যাদার অন্যতম রূপকার আশরাফুল হক নাকি দাওয়াতও পাননি।
এআরবি/আইএইচএস