দেশজুড়ে

বিএনপির সম্মেলনে কারারুদ্ধ আ’লীগ নেতার পক্ষে মহড়া-স্লোগান

বিএনপির সম্মেলনে কারারুদ্ধ আ’লীগ নেতার পক্ষে মহড়া-স্লোগান

ফরিদপুরের সালথায় বিএনপির সম্মেলনে কারারুদ্ধ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে মহড়া-স্লোগানের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার(২৪ জুন) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে সালথায় এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন উপজেলা পরিষদের মাল্টিপারপারাস মিলনায়তনে সালথা উপজেলা বিএনপির কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয় ।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সালথায় বিএনপির কর্মী সম্মেলনের দিন অন্তত দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল, নসিমন, ভ্যান, ইজিবাইক নিয়ে কারারুদ্ধ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. নুরুদ্দীন মাতুব্বরের পক্ষে স্লোগান দিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। এসময় ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ‌‘বারবার কারা নির্যাতিত বিএনপি নেতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

গত ৫ আগস্টের পর থানায় হামলা, অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া ও বিস্ফোরক আইনে করা তিনটি মামলার আসামি হিসেবে বর্তমানে কারাগারে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুদ্দীন মাতুব্বর।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সালথা উপজেলা বিএনপির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুদ্দীন মাতুব্বরকে ‘বারবার নির্যাতিত বিএনপি নেতা’ আখ্যায়িত করে মোটর শোভাযাত্রা বের করা হয়। গট্টি ইউনিয়ন বিএনপির নামে এ শোভাযাত্রাটি সকাল ১০টার দিকে গট্টি ইউনিয়ন থেকে শুরু হয়। মাঝে বিরতি দিয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শোভাযাত্রাটি বিএনপির কর্মী সম্মেলনস্থলে পৌঁছায়। পরে মিছিল করে ওই সেম্মেলনে যোগ দেন নুরুদ্দীনের সমর্থকরা। এই শোডাউনে নেতৃত্ব দেন নুরুদ্দীনের ভাই শ্রমিকলীগ নেতা মুনছুর।

নুরুদ্দীনের পক্ষে যে ব্যানারটি ব্যবহার করা হয় তার ওপরে বাম পাশে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মাঝে বেগম খালেদা জিয়া, সবশেষে তারেক রহমানের ছবি এবং ডানপাশে ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ওবায়দুর রহমানের ছবি ছিল। মাঝে বাম পাশে বড় করে নুরুদ্দীনের ছবি এবং ডানপাশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের ছবি ছিল। মাঝে লেখা ছিল—‘বারবার নির্যাতিত বিএনপি নেতা মো. নুরুদ্দীন মাতুব্বরের পক্ষ থেকে শামা আপার হাতকে শক্তিশালী করতে ২২ জুন সালথা উপজেলা বিএনপির কর্মী সম্মেলন সফল হোক। প্রচারে গট্টি ইউনিয়ন বিএনপি’।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুদ্দীন মাতুব্বরের ভাই উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মুনছুর মাতুব্বর বলেন, ‘নুরুদ্দীন মাতুব্বর আমার ভাই। তিনি আজীবন বিএনপি করেছেন। এখনো বিএনপি করেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক নন। তিনি (মুনছুর) বিএনপি করেন।’

নিজে শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে থাকার বিষয়ে বলেন, ‘এ পদের কথা আমার জানা নেই। আমি আমার পদের কোনো কাগজও কোনোদিন দেখিনি।’

Advertisement

সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলী জানান, নুরুদ্দীন মাতুব্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। তার ভাই মুনছুর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুদ্দীনের পক্ষে শোডাউনের মদদ দিয়েছেন পাশের নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার। বাবুল নগরকান্দার লস্কারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি নগরকান্দার বিএনপির নেতা হলেও সালথা-নগরকান্দা উভয় উপজেলার রাজনীতির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা নুরুদ্দীনকে আমি কোনোভাবেই কোনো মদদ দেই না। বিএনপির কেউ এমন অভিযোগ করে থাকলে তা তার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অংশ হিসেবে করে থাকবে পারে। নুরুদ্দীনকে বিএনপিতে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

সালথা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার বলেন, সালথা বিএনপির এক বহিষ্কৃত নেতার সহায়তায় এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা তখন বাধা দেইনি। কারণ জেলা থেকে আগত নেতৃবৃন্দের সামনে পরিবেশ নষ্ট হবে বলে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো নেতার বিএনপিতে আসার সুযোগ নেই। এদের প্রতিহত করতে যা যা প্রয়োজন করা হবে।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, নুরুদ্দীন মাতুব্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বিস্ফোরক, অস্ত্র ও থানায় হামলাসহ একাধিক মামলার আসামি।

এন কে বি নয়ন/এসআর/এএসএম