২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার ফলাফলে নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে ৪০ শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি পাইয়ে দেন রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখি চক্রবর্তী। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। প্রায় ১০ বছর পর সেই মামলা নিষ্পত্তি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তাতে রাখি চক্রবর্তীকে ‘গুরুতর দণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
Advertisement
গত ২ জুলাই তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয় অধিদপ্তর। তবে সেই চিঠি রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও বরখাস্ত রাখি চক্রবর্তীর কাছে পৌঁছেছে ১০ জুলাই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশে বলা হয়, বিভাগীয় মামলায় রাখি চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আনা অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্তের আগের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, রাখি চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছিল। পাশাপাশি দুদকের দায়ের করা একটি মামলাও আদালতে বিচারাধীন। গত ২ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে তার বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়, যা বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) আমরা হাতে পেয়েছি।
Advertisement
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর নম্বর বাড়িয়ে মেধাবৃত্তি পাইয়ে দেন তৎকালীন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। বিষয়টি জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুদকের রাজশাহীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ মহানগরের রাজপাড়ায় থানায় মামলা করেন। এ মামলায় গ্রেফতার হন প্রধান আসামি তৎকালীন রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম। সে সময় আত্মগোপনে চলে যান মামলার অন্য দুই আসামি তৎকালীন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাখি চক্রবর্তী ও কম্পিউটার অপারেটর সোনিয়া খাতুন।
পরে তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। এরপর ২০১৬ সালে রাখী চক্রবর্তীকে গোদাগাড়ী উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। একই সঙ্গে চলে তদন্ত কার্যক্রম। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
মামলায় প্রথমে তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা আবুল কাশেমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় এবং কর্মচারী সোনিয়া রওশনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবার তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখি চক্রবর্তীকে চাকরি থেকে অপসারণ করলো অধিদপ্তর।
Advertisement
এদিকে, বৃত্তিতে জালিয়াতির ঘটনার পর শিক্ষার্থী-অভিভাবরা আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে বৃত্তি পাওয়া ৪০ শিক্ষার্থী বৃত্তি পায়নি। এর মধ্যে ৩০ জন ট্যালেন্টপুল এবং ১০ জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল।
এএএইচ/এমআরএম/এমএস