ঝালকাঠি জেলার নলছিটি মোল্লারহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের ১৫ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ ১৭ বছর যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় এখন জনদুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত ও ভাঙনের ফলে এটি বর্তমানে চলাচলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুমে এসব গর্তে পানি জমে তৈরি হয় মরণফাঁদ।
Advertisement
দপদপিয়া থেকে নলছিটি পর্যন্ত সড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশের পাশ ভেঙে নদী ও খালে ধসে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন সময় সড়কের গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তাও ভেঙে গেছে। কিন্তু এতদিনেও কোনো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে সড়কের প্রশস্ততা মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় যান চলাচল হয়ে উঠেছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায়ই গাড়ি গর্তে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে তালতলা, মাদারঘোনা, শেরে-বাংলা, মোল্লারহাট, নান্দিকাঠি, খাজুড়িয়া এলাকায় পানি জমে যাওয়ায় দুর্ভোগ আরও তীব্র হয়েছে। বৃষ্টির সময় যানবাহনের চাকা থেকে ছিটকে আসা কাদা ও ময়লা পানি দোকানে এসে পড়ে। এতে দোকানের পণ্য নষ্ট হয়, ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং পথচারীদের চলাফেরা হয় দুর্বিসহ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মাসুদ হাওলাদার বলেন, বৃষ্টির দিনে দোকানে কাদা পানি ঢুকে পণ্য নষ্ট হচ্ছে, ক্রেতাও কমে গেছে। আমরা দীর্ঘ বছর যাবৎ কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।
অটোরিকশার চালক মো. মনির হোসেন জানান, প্রতিদিন গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। নিয়মিত মেরামতে খরচ বেড়ে গেছে। তাই স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে একটু বেশি নিতে হচ্ছে।
Advertisement
পথচারী নুসাইবা জান্নাতি বলেন, কাদায় পা আটকে যায়, পোশাক নষ্ট হয়। বাইরে বের হওয়াই কষ্টকর হয়ে যায়। তাছাড়া রোগী নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার চিন্তা করলেও ভয় লাগে। কারণ রোগী নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পথে গাড়ি উল্টে আহত হওয়ার মতো অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
স্থানীয় নাগরিক ও সাবেক ছাত্রনেতা মু. সরদার সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের সময় দপদপিয়া থেকে মোল্লারহাট পর্যন্ত সড়কটি পাকা করা হয়েছিল। তখন নিয়মিত পরিবহন চলতো। কিন্তু গত ১৭ বছরে কোনো দৃশ্যমান সংস্কার হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাবেক এমপি আমির হোসেন আমু দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বারবার নির্বাচিত হলেও কখনো সুষ্ঠু ভোটে জয়ী হননি। ফলে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ছিল না বলেই তারা মনে করেন। নির্বাচনের আগে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে সংস্কারে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
উপজেলার পৌরসভার একাংশ ও সুবিদপুর, মোল্লারহাট, রানাপাশা, নাচনমহল, কুশঙ্গল, সিদ্ধকাঠি ও কুলকাঠি, দপদপিয়া ইউনিয়নের মানুষের উপজেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র প্রধান সড়ক এটি। এই সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।
Advertisement
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বরাদ্দ এলেও তা যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়নি। বরং কিছু জায়গায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ। দ্রুত এই সড়কের পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান জানান, সড়কের ভাঙন ও গর্ত চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সংস্কার কাজ শুরু হবে।
মো. আতিকুর রহমান/এফএ/এমএস