ময়মনসিংহে এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দামে ধসে নেমেছে। সরকার নির্ধারিত দামও পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অনেকে বাধ্য হয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি করছেন। চামড়ার বাজার পতনের জন্য ট্যানারি মালিকদের দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
ময়মনসিংহ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার হাট শহরতলির শম্ভুগঞ্জ। সেখানে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। সারা বছর প্রতি শনিবার জমে এই হাট। এদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পশুর চামড়া নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা।
কোরবানির ঈদ ছিল শনিবার (৭ জুন)। ওইদিন বিকেল থেকে ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কেনেন হাটের ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনা চলে পরদিন বিকেল পর্যন্ত। সন্ধ্যার মধ্যেই লবণ মাখানোর কাজ শেষ হয়। এরপর থেকে সবাই অপেক্ষা করেন ট্যানারি মালিকদের জন্য।
যথারীতি শনিবার (১৪ জুন) সকালে ট্যানারি মালিকসহ তাদের প্রতিনিধিরা হাটে আসেন। কিন্তু ন্যায্য দাম দিচ্ছেন না তারা। সরকার নির্ধারিত দামও পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অন্যান্য ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তারা চামড়া ফিরিয়ে নিয়ে গেলে পরিবহন খরচ বাড়বে। এজন্য বাধ্য হয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি করছেন তারা।
Advertisement
ব্যবসায়ীরা জানান, হাটের দিন সকাল থেকে কয়েকঘণ্টা বৃষ্টিতে হাটে কিছুটা পানিসহ কাদা জমে যায়। তখন অনেক ব্যবসায়ী তড়িঘড়ি করে চামড়াগুলো শুকনা জায়গায় নিতে পারলেও অনেকে তা পারেননি। ফলে কাদামাটিতেই পড়ে আছে চামড়া। ইকবাল হেকার্স///, চাঁদপুর লেদার্স ও ভলুয়া কোম্পানিসহ ৭-৮ জন ট্যানারি মালিকসহ তাদের প্রতিনিধিরা হাটে আসেন। তারা প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা দিতে চান। তবে এই দামে হাটের স্থায়ী ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে নারাজ। তবে যেসব ব্যবসায়ী দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ চামড়া ব্যবসায়ীরা।
শম্ভুগঞ্জ চামড়া হাটের স্থায়ী ব্যবসায়ী শাহীন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চামড়া কিনে লবণ লাগিয়ে সংরক্ষণ করার পর থেকেই ট্যানারি মালিকসহ তাদের প্রতিনিধিদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। শনিবার ৭-৮ জন ট্যানারি মালিকসহ তাদের প্রতিনিধিরা চামড়া কিনতে হাটে আছেন। তবে ন্যায্য দাম দিতে চাচ্ছেন না। তারা প্রতি পিস চামড়া সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা দাম দিতে চাচ্ছেন। এই দামে হাটের স্থায়ী ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করছেন না। তবে যেসব ব্যবসায়ী দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন, তারা বাধ্য হয়েই বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন।’
আনোয়ার হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিম্নমানের কাঁচা চামড়া ১০০-২০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ভালোমানের চামড়া ৬০০-৭০০ টাকা দরে মোট এক হাজার ৭০০ পিস কিনেছি। লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ প্রতি পিস চামড়ায় আরও ৩০০ টাকা খরচ হয়েছে। ট্যানারি মালিকরা যে দামে চামড়া কিনতে চাচ্ছেন, সে দামে বিক্রি করা সম্ভব না। প্রতি পিস চামড়া এক হাজার টাকার বেশি বিক্রি করতে হবে। তা নাহলে চরম ক্ষতি হবে।’
কথা হয় আরেক ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতি বস্তায় ৭০ কেজি লবণ থাকে। প্রতি বস্তা লবণ ৯৫০ টাকায় কিনেছি। চামড়া কেনা, শ্রমিকদের মজুরিতেও টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া নিজেরাও পরিশ্রম করেছি। ন্যায্য দাম না পেলে আগামীতে অনেকে চামড়া ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।’
Advertisement
নেত্রকোনা থেকে গরুর ৩৫পিস চামড়া নিয়ে হাটে এসেছেন আজিজুল হক। তিনি বলেন, ‘ভালো দামের আশায় লবণ লাগিয়ে চামড়াগুলো সংরক্ষণ করেছিলাম। কিন্তু এসে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারছি না। ট্যানারি মালিকরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে চামড়া না কিনলে এই ব্যবসায় ধস নামবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্যানারি মালিকের একজন প্রতিনিধি জাগো নিউজকে বলেন, এখনো চামড়া কেনা হয়নি। কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে দামাদামি চলছে। তবে ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট হয়ে চামড়া বিক্রি করতে চাইলে কেনা হবে।
শম্ভুগঞ্জ চামড়া হাটের ইজারাদার মো. শহীনুর রহমান শহীন বলেন, হাটের ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দামে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন বলেই আমার চাওয়া। কারণ তাদের মধ্যে অনেকে ধারদেনা, বিভিন্ন সমিতি ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। এখন ন্যায্য দাম না পেলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, যথাযথভাবে চামড়া সংরক্ষণের জন্য আমরা লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে লবণ দিয়েছি। ঈদের পর ১০ দিন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের চামড়া বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। চামড়াগুলো ভালোভাবে শুকালে ভালো দাম পাওয়া যায়। আমরা চাই, মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ হাটের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামটা পাক।
ট্যানারি মালিকরা দাম কমিয়ে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন বলে জানালে তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়েছেন। এ অবস্থায় চামড়া বিক্রি করা ঠিক হবে না। আমরা ব্যবসায়ীদের পাশে আছি। তারা যেন ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
এসআর/জিকেএস