ভ্রমণ

রূপসা সেতুতে চমৎকার সন্ধ্যা

রূপসা সেতুতে চমৎকার সন্ধ্যা

বিলকিস নাহার মিতু

Advertisement

বিকেলবেলা ঘুরতে বের হলে মনের ভেতরে অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করে। তাই ঘোরার জন্য তিন-চারটি জায়গা নির্ধারণ করলাম। মোট সাতজন হয়ে গেলাম। খুলনা শহরের মুসলমান পাড়া থেকে মডার্ন মোড়ের রাস্তা ধরলাম। রাস্তার পাশ ধরে হাঁটছি। মডার্ন মোড়ের রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়ার মস্ত গাছ যেন অভিবাদন জানালো। হাঁটতে হাঁটতে পিটিআই মোড়ের বেশ কাছে চলে এসেছি। সেখান থেকে অটোতে ২০ টাকা করে উঠলাম।

রূপসা সেতুর দিকে যাওয়ার রাস্তাটা খুবই খারাপ। এই বুঝি গাড়ি উল্টে পড়লো। রূপসা সেতুর আনাচে কানাচে পরিদর্শন করানোর জন্য গাইড হিসেবে বান্ধবী রিক্তা। আনিকার সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও গানই গাইলাম। সব দেশাত্মবোধক গান। বেশ আনন্দই লাগছিলো। ৩০ মিনিটের মতো লেগে গেলো রূপসা সেতুর কাছে যেতে। যেতে যেতে সন্ধ্যা নেমে এলো।

গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম সেতুর নিচে নদীর পার ঘেঁষে খাবারের স্টল। ওপরে লাল-নীল বাতি। আকাশে তখন কাস্তের মতো এক ফালি চাঁদ। সেতুর ওপরে ওঠার জন্য পা বাড়াতেই দেখি সেতুটি যেন ঝিনুকের মধ্যে মুক্তা জ্বলছে। সেতুটি খুলনা শহর থেকে প্রায় ৪.৮০ কিলোমিটার দূরে। খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। কেউ কেউ খান জাহান আলী সেতুও বলেন। দৈর্ঘ ১.৬০ কিলোমিটার এবং ১৬.৪৮ মিটার।

Advertisement

দোতলা সিঁড়ি পার হয়ে ওপরে উঠলেই দেখা যায় কত দর্শনার্থী। সেতুর দুপাশে মানুষ হাঁটার জন্য এবং ছোট ভ্যান বা বাইক চলার জন্য লেন করা। মাঝে বড় গাড়ি চলার জন্য আলাদা লেন। হলুদ আর কালো রঙে চিহ্নিত লেন সবারই নজর কাড়ে। নদীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম চাঁদের প্রতিচ্ছবি। পানি কেমন জ্বলজ্বল করছে। অপরদিকে তখনো জাহাজের আলো চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যা কেটে রাত হয়ে গেছে। জোৎস্না রাতের আবছা আলো আর ঠান্ডা বাতাস হৃদয় জুড়ানো। মনে হলো এখানেই কাটিয়ে দিই সারারাত।

আরও পড়ুন পঞ্চগড়ে কী আছে দেখার মতো? সাজেকে একদিন: ব্যাম্বো টি ছাড়া সব ছিল!

এবার মিশন নদীর ওপারে যাওয়ার। সাতজন মিলে হাঁটা শুরু করলাম। প্রায় ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে জীবনের প্রথম হেঁটে পার হলাম। সেতু থেকে নিচে নামতেই দেখি এপারে ভিড় কম। আশপাশে নদীকে কেন্দ্র করে পার্কও আছে। আমরা পার্কে না ঢুকে সেতুতে ওঠার চেষ্টা করলাম। ততক্ষণে সবার শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। কেউ আর শক্তি পাচ্ছে না। কোনো রকমে ওপারে উঠে ভাবলাম গান ধরতে হবে। গানের তালে তালে আবারও পার হবো।

আনিকা আবার সুর ধরলো, ‘যাও পাখি বলো তারে, সে যেন ভোলে না মোরে’। এমন করে প্রতি গানের এক কলি গাইতে গাইতে কখন যে সেতু পার হয়ে গেলাম; বুঝতেই পারলাম না। সেতু থেকে নেমে সবার সিদ্ধান্ত; রূপসা ঘাটে রূপসা রিভারভিউ পার্ক দেখতে যাবো। অটোতে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে গেলাম। ভেতরে ঢুকতেই মনে হলো নার্সারিতে ঢুকেছি। ছোট-বড় নানা প্রজাতির গাছ। প্রধান ফটকটাও সুন্দর। বাগানবিলাসে সুসজ্জিত হয়ে আছে প্রাঙ্গণ। খাঁচায় নানা রকম পাখি।

এখান থেকে রূপসা নদীর দৃশ্যটা বেশ চমৎকার। গোল টেবিলে সজ্জিত প্রতিটি আসন। আমরা এক জায়গা বসলাম। এখানে মালাই চা অনেক ভালো। সাতটি মালাই চা অর্ডার করলাম। প্রতি কাপ ৭০ টাকা। চা পাওয়া মাত্রই মনে পড়লো মান্না দের সেই গান, ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’। গানের সাথে মিল রেখে আমরা সাত জন থাকলেও আনিকার আর গান গাইবার ইচ্ছে নেই। কারণ মালাই চা খেতে খুবই বাজে হয়েছে।

Advertisement

পার্কে সারাক্ষণ বিরহের গান বাজতে থাকলো। কতক্ষণ সেখানে গল্প করতে করতে দেখি রাত আটটার বেশি বাজে। এবার বাসায় ফিরতে হবে। আবারও সাতজন অটোতে উঠলাম। দৌলতপুরের উদ্দেশ্যে ৩০ টাকা করে। চমৎকার এক সন্ধ্যা জোৎস্নার আলো নদীর কলকল ধ্বনিতে অন্যরকম অনুভূতি জাগালো। বাসায় ঢুকতে ঢুকতে ভাবি, এমন সন্ধ্যায় আবার সেখানে যাবো। পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করার যে কী শান্তি; তা কেবল ভ্রমণপিপাসুরাই বুঝবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।

এসইউ/এএসএম