আগামী বছরের (২০২৬ সালের) ১ জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পুরোপুরি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতের তদারকি আরও আধুনিক, ফলপ্রসূ ও জবাবদিহি করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
Advertisement
তবে রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া ব্যাংক খাতের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা শক্তিশালী ব্যাংক খাত চাই। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ছাড়া তা সম্ভব নয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এরই মধ্যে ২০ ব্যাংকে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ৬১ তফসিলি ব্যাংকে ঝুঁকিনির্ভর তদারকি কাঠামো চালু হবে। এ জন্য ১২টি কমিটি গঠন করা হবে, যা ৩৬০ ডিগ্রি তদারকি করবে।
Advertisement
গভর্নর জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ছয় ব্যাংকের মার্জ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে, তবে যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে সেসব ব্যাংক মার্জের বাইরে থাকতে পারে। পাশাপাশি পুনর্গঠনের পরও যেসব ব্যাংকের বোর্ড কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দেখাতে পারছে না, প্রয়োজনে তাদের বোর্ড আবারও ঢেলে সাজানো হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুনব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে ৫০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ হতে হবে ব্যাংকখাত নজরদারিতে বড় পরিবর্তন আনছে বাংলাদেশ ব্যাংককিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে যে কেন তাদের বন্ধ করা হবে না। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে সেগুলো বন্ধেরও ইঙ্গিত দেন গভর্নর।
নতুন তদারকি কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, পরিচালনাগত, আইনগত ও কৌশলগত ঝুঁকি আরও সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার অভ্যন্তরীণ সংগঠনও ঢেলে সাজাচ্ছে। গঠন করা হচ্ছে তদারকি নীতিমালা ও সমন্বয় বিভাগ, তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি বিভাগ এবং অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিশেষ ঝুঁকি তদারকি বিভাগ।
Advertisement
সব ব্যাংকের জন্য আলাদা আলাদা তদারকি টিম থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণেও জোর দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যভিত্তিক তদারকির জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম। এর ফলে ঝুঁকির প্রকৃত চিত্র দ্রুত বোঝা এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এ রূপান্তরের মাধ্যমে ব্যাংক খাতে জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত হবে, আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়বে। এতে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী হবে।
ইএআর/কেএসআর