ফেসবুকে মোটা অঙ্কের মুনাফার আশ্বাস দিয়ে বিভিন্নজনের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুই নাইজেরিয়ান নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতার নাইজেরিয়ার দুই নাগরিক হলেন ফ্রাঙ্ক কোকো ও ইমানুয়েল। গ্রেফতার বাংলাদেশির নাম সুইটি আক্তার।
Advertisement
এ সময় তাদের কাছে দুটি ল্যাপটপ, ১০টি মোবাইল ফোন, একটি ট্যাব ও একটি হার্ড ড্রাইভ পাওয়া গেছে।
র্যাব জানায়, রোববার রাতে ও সোমবার রাজধানীর বসুন্ধরা ও মিরপুরের পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার নাইজেরিয়ানরা মিডিয়া হিসেবে বাংলাদেশি নারীদের ব্যবহার করতেন।
সোমবার (৭ জুলাই) রাতে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জাহিদুল করিম।
Advertisement
তিনি বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি নম্বর ব্যবহার করতেন। বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষুদ্র থেকে মধ্যম মানের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চক্রটি বিভিন্ন দফায় অর্থ আত্মসাৎ করেছে। ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে চক্রটি প্রতারণার ফাঁদও তৈরি করতো।
র্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম নম্বর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে চক্রটিতে নাইজেরিয়ার কিছু নাগরিকের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশি নারীদের ব্যবহার করে আড়ালে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট নম্বরে সরাসরি ক্যাশইন, ক্যাশ আউটের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।
আরও পড়ুনলাভের প্রলোভন দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, নাইজেরিয়ানসহ গ্রেফতার ৩ মিরপুরে বাসায় ঢুকে আ’লীগের ফ্যাসিস্ট বলে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বাস অর্জনের জন্য এদের মধ্যে থেকে একজন বিত্তবান বিদেশি নাগরিক সাজেন। ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ, বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে ডলারের প্যাকেজ পাঠানো অথবা কাস্টম ক্লিয়ারেন্সে বিদেশ থেকে পাঠানো দামি পণ্য নিষ্পত্তি করার জন্য নির্ধারিত চার্জ দাবি করে তারা প্রতারণা করতেন।র্যাব বলছে, এক্ষেত্রে তারা ফটোশপ করা বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র ও সার্টিফিকেট বানিয়ে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে প্রথম ধাপে সামান্য অর্থ হাতিয়ে নিত। পরবর্তী সময়ে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স অথবা বিভিন্ন ডকুমেন্টেশনের জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবি করা হতো, যেখানে অনেকেই প্রলুব্ধ হয়ে টাকা দেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদুল করিম আরও বলেন, গ্রেফতার নাইজেরিয়ান নাগরিক কোকো ও ইমানুয়েল প্রায় ২ বছর এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের সহযোগী সুইটি আক্তার ৩ মাস আগে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে কোকো বছর খানেক আগে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ছাড়া পেয়ে আবারও প্রতারণায় জড়ায় পড়েন তিনি। তাদের কাছে ২টি নগদ ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৮ লাখ টাকার স্টেটমেন্ট পাওয়া যায়।
Advertisement
র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতার বিদেশি দুই নাগরিকের ভিসার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে বলে তারা জানান। একজনের পাসপোর্ট আগেই জব্দ করা হয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ না থাকলে বাড়ি ভাড়া বা সাবলেট না দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদুল করিম বলেন, এখন পর্যন্ত শতাধিক নাগরিকের কাছ থেকে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য মিলেছে। কেউ ৫০ হাজার দিয়েছেন, কেউ এক লাখ দিয়েছেন। এ চক্রে দেশি-বিদেশি আরও কিছু ব্যক্তি জড়িত। তদন্ত করছি, তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।
টিটি/কেএসআর