এক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ-কর্মবিরতি, চেয়ারম্যান কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা নজিরবিহীন এসব ঘটনা ঘটায় কয়েকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
Advertisement
এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের এই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটিতে হানা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নানা অনিয়মের অভিযোগে বিএসইসিতে অভিযান পরিচালনা করছে দুদক।
সোমবার (১০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুদকের দুইজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল এই অভিযান পরিচালনা করতে বিএসইসি কার্যালয়ে যান।
দুদকের দলটি প্রথমে বিএসইসির চেয়ারম্যানে সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর সার্ভিলেন্স ও মনিটরিং বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে অভিযান পরিচালনা করছেন। এর আগে গত সপ্তাহে দুদকের একটি দল প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায়।
Advertisement
এদিকে গত মঙ্গলবার বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আদেশ জারি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং পরেরদিন বুধবার বিএসইসি ঘেরাও করে তারা বিক্ষোভ করেন। সেই সঙ্গে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন।
তবে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা পদত্যাগ না করায় বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি পালন করেন কর্মকর্তারা। এমন ঘটনা ঘটলে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতিতে নেতৃত্ব দেওয়া বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে আবার কাজে ফেরেন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন শেয়ারবাজারের স্টেকহোল্ডাররা।
আরও পড়ুন অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে বিএসইসির তদন্তে স্টেকহোল্ডারদের একাত্মতা কর্মবিরতি প্রত্যাহার, কাজে ফিরেছেন বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিএসইসির অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির দাবিবৈঠক শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের যে তদন্ত কার্যক্রম চলছে এই কাজের সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করছি।
Advertisement
তিনি বলেন, সংকট পরিস্থিতিতে কীভাবে বাজারের আস্থা ধরে রাখা যায় এবং অতিদ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে দাবি দাওয়া আদায়ের প্রচেষ্টা করেছিল সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়, আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিগত বছরগুলোতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার বিশদ তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলমান যে বিচার কার্যক্রম এর সাথে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মনে করি বিএসইসিতে অনেকে আছেন যারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের কাছে অনুরোধ করেছি এই সৎ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা যেন এই মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয় তারা যেন তাদের দৈনন্দিন কাজটি সুস্থভাবে করতে পারে সেটার বিষয় তারা যেন পদক্ষেপ নেন। তারা আশ্বস্ত করেছেন ওই কাজটি অলরেডি শুরু হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি, আপনারা শক্ত হাতে হাল ধরেন। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে এটা মোকাবিলা করবো।
বৈঠকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, আজকে এখানে গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডাররা এসেছিলেন। তারা আমাদের সহমর্মিতা জানিয়েছেন। তারা আমাদের সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাজে ফিরে এসেছেন। আমরা সবাইকে বলেছি কাজে যোগদান করতে। আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবো। সবাই কাজে যোগদান করলে, কাজ স্বাভাবিক নিয়মে চলে চলবে।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাব বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, এখনো সেই সময় হয়নি। পরবর্তীতে আলোচনা করে আরও বিস্তারিত আপনাদের জানানো হবে।
স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের বৈঠকের একদিন পরেই বিএসইসিতে অভিযানে গেলো দুদকের দল।
এমএএস/এমআরএম