সানজানা রহমান যুথী
Advertisement
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে। ভালোবাসতে শেখায় আমাদের প্রিয়জনকে, আমাদের প্রকৃতি-সংস্কৃতিকে। ভালোবাসা শুধু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের প্রকৃতি-সংস্কৃতিও ভালোবাসার অংশ। এসব বিষয়ই আমাদের স্নেহের বন্ধনে জড়িয়ে আছে। আমাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিশ্ব ভালোবাসার এই বিশেষ দিনে বাংলাদেশে পালিত হয় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস—সুন্দরবন দিবস। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি।
দিন দিন সুন্দরবন তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। মানুষের অসচেতনতার জন্যই সুন্দরবন তার সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। সুন্দরবনকে ভালোবাসার চেতনা ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালন করা হয়।
Advertisement
২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়।
সুন্দরবনে জালের মতো জড়িয়ে আছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। সুন্দরবনে ২৯০টি পাখি, ১২০টি মাছ, ৪২টি স্তন্যপায়ী, ৩৫টি সরীসৃপ এবং আটটি উভচর প্রজাতিসহ ৪৫৩টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাসস্থান আছে। আছে প্রচুর সুন্দরী এবং গেওয়া গাছের প্রজাতি।
আরও পড়ুন
বিষমুক্ত শুঁটকির আধুনিক পদ্ধতি ও চেনার কৌশল পরিযায়ী পাখিতে মুগ্ধ লক্ষ্মীপুরসৃষ্টিকর্তা যেন পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অর্ধেকই সুন্দরবনকে দান করেছেন। ১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ ছাড়া সুন্দরবন ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
Advertisement
এ ছাড়া সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অনেক উপন্যাস ও সিনেমা। তার মধ্যে ‘সুন্দরবনে সাত বৎসর’ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি অন্যতম রোমাঞ্চকর উপন্যাস। এমনকি ‘অপারেশন সুন্দরবন’ বাংলাদেশের একটি রোমাঞ্চকর পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র। সুন্দরবনকে জলদুস্য মুক্ত করার অভিযান নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন দীপংকর দীপন।
প্রতি বছর দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করেন। এর মাধ্যমে সরকারও লাভবান হয়ে থাকে। সুন্দরবনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র। এতে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের।
একটি দেশ তখনই সত্যিকারের সমৃদ্ধ হয়; যখন তার প্রকৃতি ও সংস্কৃতি নিরাপদ থাকে। আমরা যেমন ভালোবাসি আমাদের প্রিয়জনদের; তেমনই ভালোবাসতে হবে আমাদের প্রকৃতিকে। সুন্দরবন শুধু একটি বন নয়, এটি আমাদের রক্ষা করে দুর্যোগের হাত থেকে। দেয় অক্সিজেন, জীবিকা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য। তাই সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।
এসইউ/এমএস