কৃষি ও প্রকৃতি

মিঠাপানির কাছিম ও কচ্ছপ রক্ষায় উদ্যোগ

‘পরিবেশ বন্ধু কাছিম, প্রকৃতিতে বাঁচতে দিন’—স্লোগানকে ধারণ করে শুরু হয়েছে ক্যাম্পেইন। ২ ফেব্রুয়ারি ওয়াইল্ডলাইফ কনজার্ভেশন সোসাইটি ও বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে সাতক্ষীরায় এ ক্যাম্পেইন শুরু হয়। বিপন্ন মিঠাপানির কাছিম ও কচ্ছপের সংরক্ষণে দেশের জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ ও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এ ক্যাম্পেইন। ক্যাম্পেইনটি পর্যায়ক্রমে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও খুলনায় চলবে। এসব জেলায় অবৈধ শিকার, বাণিজ্য ও খাদ্য হিসেবে গ্রহণের কারণে বাংলাদেশের কাছিম ও কচ্ছপের সব প্রজাতিই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে।

Advertisement

২০১২ থেকে ২০২৪ সালে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রায় ৩৪ হাজারেরও বেশি কাছিম ও কচ্ছপ অবৈধভাবে বিক্রি এবং পাচারের খবর প্রকাশিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ কাছিম ও কচ্ছপ পাচারের একটি বৈশ্বিক হটস্পট হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি প্রজাতিই শিকার, পাচার, বাসস্থান হ্রাস এবং ভোক্তা চাহিদার কারণে বিলুপ্তির মুখোমুখি হচ্ছে।

২০২২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর এনভায়রনমেন্ট, ফুড অ্যান্ড রুরাল অ্যাফেয়ার্সের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত একটি প্রকল্পের অধীনে মিডিয়া বিশ্লেষণ ও হাট-বাজার জরিপের মাধ্যমে কাছিম ও কচ্ছপের বাণিজ্য ও খাওয়ার হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার আটটি জেলায় অমুসলিম জনগোষ্ঠীর জ্ঞান, আচরণ ও অভ্যাসবিষয়ক জরিপ পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে সাতক্ষীরা, খুলনা, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে কাছিম ও কচ্ছপ বেচাকেনা ও খাওয়ার আধিক্য দেখা যায়। চারটি জেলায় জরিপকৃত পরিবারসমূহের মধ্যে প্রায় ৫০% পরিবার গত এক বছরে অন্তত একবার কাছিম ও কচ্ছপের মাংস খেয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, কাছিম ও কচ্ছপের ভোক্তারা এবং ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই স্বাস্থ্যঝুঁকি, আইনগত বিধি-নিষেধ এবং কাছিম ও কচ্ছপের পরিবেশগত বা সাংস্কৃতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন নন। এ অবস্থার উত্তরণের জন্য ওয়াইল্ডলাইফ কনজার্ভেশন সোসাইটি সাতক্ষীরা, খুলনা, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কাছিম ও কচ্ছপের চাহিদা কমানোর জন্য একটি ভিন্নধর্মী মনোজ্ঞ শিক্ষামূলক কার্যক্রম বা ক্যাম্পেইনের সূচনা করেছে।

Advertisement

স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনটিতে কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ও করণীয় সংযোজন করা হয়েছে। যেমন- কাছিম ও কচ্ছপ খাওয়া স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের কাছিম ও কচ্ছপ বিষয়ক বিধি-নিষেধ। কাছিম ও কচ্ছপের পরিবেশগত ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব।

আরও পড়ুন পরিযায়ী পাখিতে মুগ্ধ লক্ষ্মীপুর  ২৩০ নদ-নদী: উদ্ধারের এখনই সময় 

ক্যাম্পেইনে আছে বাড়ি-বাড়ি প্রচারণা, রেডিও প্রোগ্রাম, মাইকিংয়ের মাধ্যমে তথ্যপ্রচার, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্কুল প্রোগ্রাম, কাছিম দৌড়, পট গান পরিবেশনা এবং ধর্মীয় গুরুদের সঙ্গে মতবিনিময়। কাছিম ও কচ্ছপ সংরক্ষণের গুরুত্ব ও করণীয় বিষয়ক পোস্টার, স্টিকার এবং লিফলেট বিতরণ।

ক্যাম্পেইনটি ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তালা ব্রজেন দে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে। সাতক্ষীরা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা জি এম সেলিমের সভাপতিত্বে ক্যাম্পেইনটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের পরিচালক মো. সানাউল্ল্যাহ পাটোয়ারী।

ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ৩০টি প্রজাতির মধ্যে ২৬টিই এরই মধ্যে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে। প্রতিদিনই এরা নতুন-নতুন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই ভোক্তা চাহিদা হ্রাস ও আইন প্রয়োগ জোরদার করার মাধ্যমে এ প্রজাতিগুলো রক্ষা করতে হবে। এতে অমুসলিম সম্প্রদায়সহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

Advertisement

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. সানাউল্ল্যাহ পাটোয়ারী বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছিম রক্ষা করতে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকার, গণমাধ্যমকর্মী, ধর্মীয় গুরুসহ সব নাগরিককে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই। এ প্রজাতিগুলোকে সংরক্ষণ করা মানে শুধু এদের সংরক্ষণ নয় বরং আমাদের ঐতিহ্যকে রক্ষা করা।’

কাছিম এবং কচ্ছপ সংরক্ষণে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জি এম সেলিম স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশে তাদের বিরক্ত বা শিকার না করা, খাদ্য হিসেবে গ্রহণ না করা এবং এদের আবাসস্থল, যেমন- পুকুর এবং জলাশয়গুলো ধ্বংস না করা এ প্রজাতিগুলোর সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এসইউ/জিকেএস