জাহিদুল ইসলাম মেহেদী
Advertisement
বাংলাদেশে ইলিশ মাছ শুধু একটি মাছ নয়; এটি দেশের অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতি বছর সরকারি হিসাব অনুযায়ী ইলিশ আহরণে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির দাবি করা হয়। সরকারের পরিসংখ্যান মতে, ইলিশ উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে বাস্তবতায় বাজারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।
ইলিশ আহরণের বাস্তবতাসরকারি হিসাবে ইলিশ আহরণ বৃদ্ধি হলেও দেশের বিভিন্ন বাজারে ইলিশের সংকট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে ইলিশের সহজলভ্যতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি এর দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। যেখানে একসময় বাজারে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত; সেখানে এখন উচ্চমূল্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে অল্পসংখ্যক ইলিশ কিনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, যদি ইলিশ আহরণ বৃদ্ধি পায়, তবে বাজারে এর অভাব কেন?
দাম বৃদ্ধি ও বাজার সংকটবর্তমানে ইলিশের দাম এতটাই বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে এই মাছ কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত গত কয়েক বছর ধরে ইলিশের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। যা নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য বড় ধাক্কা। বাজারে ৫০০ থেকে ১৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ৯০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। যা আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
Advertisement
ইলিশ রপ্তানি: প্রতিবেশী দেশগুলোয় ইলিশ রপ্তানি একটি বড় কারণ হিসেবে ধরা হয়। দেশের বাজারে ইলিশের চাহিদা পূরণের আগে রপ্তানি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে ইলিশের অভাব দেখা দিচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা: সামুদ্রিক ও নদীর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশের প্রজনন স্থান ও সময়ে পরিবর্তন আসছে। ফলে প্রজনন মৌসুমে ইলিশের সংখ্যায় কমতি দেখা দিচ্ছে।
অসাধু ব্যবসায়ী চক্র: অনেক ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে। তারা ইলিশ মজুত করে রাখেন এবং বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দেন, যা দামের ওপর প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন মুকুল আসার আগেই আম গাছের যত্ন নিন বিটি বেগুন চাষে কমে কীটনাশকের ব্যবহার: বাকৃবি অধ্যাপকইলিশ আহরণ বৃদ্ধি: দাবি বনাম বাস্তবতা সরকারি প্রতিবেদনের বিপরীতে বাস্তবিক তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে ইলিশের স্বাভাবিক প্রজনন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। তাছাড়া নদীর দূষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা ইলিশের প্রজনন ক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে সামগ্রিক ইলিশ আহরণে প্রকৃতপক্ষে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নেই।
Advertisement
ইলিশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে এবং বাজারের সংকট নিরসনে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:
ইলিশের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ: দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পরেই রপ্তানির অনুমতি দেওয়া উচিত।
ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সুরক্ষা: ইলিশের প্রজনন ও অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিত রাখতে নদীগুলোতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
বাজার নিয়ন্ত্রণ: সরকারের উচিত বাজারে মজুত ও কৃত্রিম সংকটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। যেন সাধারণ মানুষ সহজে ইলিশ কিনতে পারেন।
ইলিশের সংকট এবং দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি দাবি অনুযায়ী ইলিশ আহরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে বাজারে এর সঠিক প্রতিফলন নেই। এই অসংগতি দূর করতে নীতিনির্ধারকদের উচিত বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যাতে দেশের সাধারণ মানুষও ইলিশের স্বাদ উপভোগ করতে পারেন।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/জিকেএস