অর্থনীতি

ভুল সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত, পরিণতি ভালো হবে না

অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে অর্থনীতিতে সফলতা নেই বললেই চলে। দেশের অর্থনীতি অনেকটাই স্থবির হয়ে গেছে। আমরা সফলতা আনতে পারিনি ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বছরের মাঝপথে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে ভুল সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিণতি আগামী দিনগুলোতে খুব একটা ভালো হবে বলে আমি মনে করি না।

Advertisement

আরও পড়ুন কর-ভ্যাটের হার যুক্তিযুক্ত করা হলে দেশ সুন্দরভাবে চলবে

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর এমসিসিআই কনফারেন্স হলে জাগো নিউজ আয়োজিত ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় একথা বলেন ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী।

বাড়তি ভ্যাট-ট্যাক্স প্রসঙ্গে মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যা কাজে লাগেনি। সুদের হার বাড়ানো হয়েছে তারপরও মূল্যস্ফীতি কমেনি। ভ্যাট বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে আইএমএফ ঋণের শর্তের কারণে। আইএমএফের শর্ত ছিল এ কারণেই ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। তাদের প্রেসক্রিপশন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কখনো কাজ করেনি, এবারও করবে না।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, রাজস্ব বাড়ানোর ফাঁকফোকরগুলো বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজস্ব ফাঁকির সংস্কৃতি অতীত থেকে চালু আছে, এটা বন্ধ করতে হবে। এজন্য আমাদের দৃঢ় ও শক্ত পদক্ষেপের দরকার, যাতে রাজস্ব আদায় সহজ ও স্বাভাবিক করতে পারি।

Advertisement

আরও পড়ুন পরিবহন-বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে  ভ্যাট-ট্যাক্সের জাঁতাকলে বিস্কুটের প্যাকেট আর কত ছোট হবে  বর্ধিত ভ্যাট-শুল্কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা ভ্যাট বৈষম্য দূর করলে সরকারের টাকার অভাব হবে না

মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ফাঁকফোকর রেখে শুধু করের হার বাড়িয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হবে কি না এটা নিয়ে সংশয় আছে। এই ফাঁকফোকর দিয়ে অনেক কিছু বেরিয়ে যাবে। এখন যেমন রাজস্ব না দিয়ে একটা বড় অংশ বেরিয়ে যাচ্ছে তখনও বেরিয়ে যাবে। যদি করহার বাড়ে তবে অনেকের কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও বাড়বে। আমরা কর আদায়ের ব্যবস্থাকে যদি কার্যকর না করি তাহলে শুধু করহার বাড়িয়ে আমাদের সফলতার প্রচেষ্টা সফল হবে বলে মনে করি না।

মুদ্রানীতি খুব একটা কাজে লাগেনি মন্তব্য করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশ করলো, এটাও কাজে লাগেনি। সুদের হার বেড়ে গেছে, আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। এতে আমাদের পরিণতি খুব খারাপ হবে। আমরা কেন ভুল সিদ্ধান্তের কথা বলছি, কারণ এগুলো চিন্তাভাবনা করে নেওয়া হচ্ছে না। হঠাৎ করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছে আমরা ভ্যাট বাড়িয়ে দিলেই সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলো। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের যত প্রেসক্রিপশন দিয়েছে তা সঠিক কাজ করেনি। তাদের প্রেসক্রিপশন ফেল করবে, কারণ অনেকে কিন্তু কথার সুর পাল্টে ফেলছেন যে তারা যদি টাকা না দেয় সমস্যা নেই। সুতরাং সময় নষ্ট করে সোনার হরিণের পেছনে ছুটে লাভ হবে না।

আইএনএমর নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, শুধু ভ্যাটের হার বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়াতে সক্ষম হবো না। এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদের চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কাজেই এই কালচার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রবৃদ্ধি বাড়লে রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়বে। বাড়তি মূল্যস্ফীতির চাপ সাধারণ মানুষকে আরও সমস্যায় ফেলছে।

Advertisement

এমওএস/এএসএ/এমএমএআর/জিকেএস