দেশজুড়ে

স্কুলছাত্র কাশেমের বাড়িতে শোকের মাতম

গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় নিহত স্কুলছাত্র আবুল কাশেমের (১৮) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৮টার দিকে খুনিদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করে ছাত্র-জনতা।

Advertisement

স্থানীয় ও নিহতের স্বজনরা জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুর রাজবাড়ি ময়দানে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় বোর্ড বাজার সংলগ্ন আল হেরা সিএনজি পাম্পের মাঠে আরেকটি জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আবুল কাশেমের ফুফু নাসিমা বেগম বলেন, দেড় বছর বয়সে তার মা রেখা বেগম তাকে রেখে অন্যত্র চলে যান। আজ পর্যন্ত তার মায়ের দেখা নেই। পরে তার বাবা হাজী জামাল উদ্দিন চিশতি ফের বিয়ে করেন। আর আবুল কাশেম বড় হয় দাদি আলেক জানের কাছে। তিনি মারা যাওয়ার পর কাশেম একা হয়ে যায়। পাঁচ বছর আগে বাবাও মারা যান। স্কুল পড়ুয়া বোন সুইটি চাচার কাছে থাকেন। আবুল কাশেম একাই থাকতো বাবার রেখে যাওয়া দেড় কাঠার একটি বাড়িতে। সেখানে তিনটি কক্ষ ভাড়া দিয়ে একটিতে সে নিজে থাকতো। নিজেই রান্না করে খেতো। পাশাপাশি স্থানীয় অনুশীলন প্রি ক্যাডেট একাডেমিতে অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো সে। পড়ালেখায় অনিয়মিত থাকলেও শ্রমিকের কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে উপার্জন করতো। এতেই তার সংসার চলতো।

আরও পড়ুনমোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলায় আহত কাশেম মারা গেছেন

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সে বোর্ডবাজার এলাকায় ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে ছিল। ছাত্ররা যেখানেই আন্দোলনের ডাক দিতো সেখানেই যে চলে আবুল কাশেম।

Advertisement

গত ৭ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় অভিযুক্ত সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুরের খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ঠেকাতে যায়। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুত্বর আহত আবুল কাশেম। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার বিকেল ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়।

এদিকে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শহরে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা। মিছিলটি শহরের বিবাড়ি মোড় থেকে শুরু হয়ে শিববাড়ি মোড়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হয়ে রাজবাড়ি সড়কে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

এ বিষয়ে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, মহানগরের ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময়ে আওয়ামী লীগের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেন। এতে ১৭ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনায় রোববার দুপুরে একটি মামলা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুর জেলার আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ মোহিত। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এনিয়ে ওই মামলায় ১৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

মো.আমিনুল ইসলাম/আরএইচ/জেআইএম