জাতীয়

চাঁদাবাজি বন্ধে ‘গুন্ডা প্রতিরোধ স্কোয়াড’ গঠনের সুপারিশ

চাঁদাবাজি ও ঘুস লেনদেন বন্ধে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ‘গুন্ডা প্রতিরোধ স্কোয়াড’ গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। হাট-বাজার, ঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে এমনকি সরকারি সেবা পেতে অনৈতিক লেনদেন বা ঘুস বন্ধেও এ স্কোয়াড কাজে আসবে। সরকারি সেবা পেতেও অনেক সময় ঘুসে দিতে হয়। এ ধরনের অনৈতিক লেনদেনের সমস্যা সরকারি সেবার বাইরে বেসরকারি খাতেও বিস্তৃত। যেমন বাজারঘাট, পরিবহন ও নির্মাণ খাত।

Advertisement

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

‘গুন্ডা প্রতিরোধ স্কোয়াড’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের সভাপতি ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শিদ বলেন, যেহেতু সরকারের সাধারণ বাহিনী দিয়ে এগুলো দমন করা যায়নি, তাই এই বিশেষ স্কোয়াড গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এটি পরীক্ষামূলকভাবে করা যেতে পারে। এই স্কোয়াড গঠনে সরকারি সংস্থার সদস্য কিংবা বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কর্মীও নেওয়া যেতে পারে।

বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভাপতি আরও বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। সেজন্য আমরা একটি স্কোয়াড গঠনের সুপারিশ দিয়েছি। এটি বাস্তবায়নে অনেক বড় কিছুর প্রয়োজন নেই।

Advertisement

টাস্কফোর্সের সুপারিশে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুশাসন নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংস্কার কমিশন (রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশন) গঠনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ড. মুর্শিদ বলেন, আইনকানুন-নিয়মনীতির অতি নিয়ন্ত্রণ এবং আমলাতন্ত্রের লালফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাধা সৃষ্টি করছে। এ জন্য একটি সংস্কার কমিশন গঠন অপরিহার্য। টাস্কফোর্সও সুপারিশে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, পেশাদারদের দিয়ে সরকারি পর্যায়ে নেতৃত্ব গঠন, সরকারি সেবা সহজ করা, বাজারের চাহিদা অনুসারে শ্রমশক্তি প্রস্তুত করা, রপ্তানি বৈচিত্র্যময় করা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মজুত বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় সুপারিশ করছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে নানা ধরনের সুপারিশ থাকছে টাস্কফোর্সর সুপারিশে। এর মধ্যে অন্যতম হলো একটি জায়গায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা। রপ্তানি বাড়াতে দুটি উপায়ের কথা বলা হয়েছে। একটি হলো- উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় খাতগুলো নানা ধরনের নীতি সহায়তা দেওয়া। অন্যটি হচ্ছে, তৈরি পোশাকের বাইরে প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বছরে ১০ লাখ ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করে। এসব প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিতে হবে। এছাড়া অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার বৃদ্ধিকে কৌশলগত অগ্রাধিকারে আনতে হবে বলে মনে করছে কমিশন।

টাস্কফোর্স বলেছে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা দরকার। কেননা দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচলিত ছাত্ররাজনীতি একাডেমিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এছাড়া ব্যাংক খাত সংস্কারসহ নানা বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ড. কে এ এস মুর্শিদ বলেন, গত ৫০ বছরে ক্যাম্পাসে অনেক রাজনীতি হয়েছে। কিন্তু আমরা ভালো কোনো ফল দেখিনি। এশীয় মহাদেশ ছাড়া বিশ্বের কোথাও ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নেই। ছাত্ররা নিজেদের দাবি-দাওয়া এমনকি সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করতে পারে। তাই বলে লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা দরকার। শিক্ষাক্ষেত্রে আরও যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- যে কোনো পরিস্থিতিতে অটোপাস বন্ধ করা। জিপিএ-৫ পদ্ধতি কোচিংনির্ভরতা বাড়াচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমিয়ে রাখতে হবে।

Advertisement

প্রতিবেদনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করা হলে সাধারণ মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নিশ্চিত হবে। ফলে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা খরচের অর্থ সাশ্রয় হবে।

টাস্কফোর্স বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব অন্যতম বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষায় বিদেশি বিনিয়োগ এলে দক্ষশ্রমিকের চাহিদার ঘাটতি পূরণ হবে এবং ওই সনদ আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এনে দুই বছরের বিএ (টেক) ডিগ্রি দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া শিল্প, স্বাস্থ্য ও সেবা খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।

এমওএস/বিএ/এএসএম