দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মেতে আছে ওয়েবোমেট্রিক্স র্যাঙ্কিং নিয়ে। বাংলাদেশের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। সেই সঙ্গে আছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। এ ছাড়া প্রায়ই আলোচনায় আসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং। আবার সেই র্যাঙ্কিংয়ে স্থান না থাকায় মনঃক্ষুণ্ন হন অনেকে, অনেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে কথার ঝড়ে ধুয়ে দেন! অনেকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করেন কোন কোন কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নতি হয় না।
Advertisement
আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যে, কী পদ্ধতিতে করা হয় এসব র্যাঙ্কিং, এবং কোন প্রতিষ্ঠানের র্যাঙ্কিং কী অর্থ বহন করে। আজ দেখে নিন ওয়েবোমেট্রিক্স র্যাঙ্কিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ কোন কোন প্যারামিটারের ভিত্তিতে ও কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র্যাঙ্কিং করে। www.webometrics.info/en
ওয়েবোমেট্রিক্স র্যাঙ্কিং কী?ওয়েবোমেট্রিক্স র্যাঙ্কিং একটি বৈশ্বিক র্যাঙ্কিং সিস্টেম যা পৃথিবীর প্রায় ৩১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন উপস্থিতি এবং সেগুলোর প্রভাবের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূল্যায়ন করে। সাইবারমেট্রিক্স ল্যাব নামক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এটি প্রকাশ করে যা, স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের (সিএসআইসি) সঙ্গে যুক্ত। এই র্যাঙ্কিং প্রথম চালু হয় ২০০৪ সালে। সাধারণত জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে, অর্থাৎ বছরে দুবার এই র্যাঙ্কিং আপডেট করা হয়।
ওয়েবোমেট্রিক্স র্যাঙ্কিংয়ের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো১. ওয়েব উপস্থিতির ওপর ফোকাস গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংগুলোর সঙ্গে ওয়েবোমেট্রিক্স এর একটি স্পষ্ট পার্থক্য আছে। সেটি হলো অনলাইন উপস্থিতির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় এটি। অন্য র্যাঙ্কিংগুলোতে অ্যাকাডেমিক খ্যাতি, গবেষণা ফলাফল বা ফ্যাকাল্টি পুরস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়। ওয়েবোমেট্রিক্স বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট, অনলাইনে তাদের উপস্থিতি এবং প্রভাবের ওপর ফোকাস করে।বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের জ্ঞান-গবেষণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এবং অ্যাকাডেমিক কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করে ওয়েবোমেট্রিক্স।
Advertisement
২. উদ্দেশ্যজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা সবার সামনে উন্মুক্ত রাখতে উৎসাহিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের অনলাইন উপস্থিতি ও গবেষণা প্রচার করা, এবং মানোন্নয়ন করতে উৎসাহিত করাই এই র্যাঙ্কিংয়ের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল প্রভাবকে সবার সামনে তুলে ধরাও একটি উদ্দেশ্য বটে।
৩. র্যাঙ্কিং পদ্ধতিবিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে দেওয়া ডেটা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট প্যারামিটার বা সূচকগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় র্যাঙ্কিং। প্রধান সূচক ও তাদের গুরুত্ব:দৃশ্যমানতা (৫০%): বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব ডোমেনে বাহ্যিক লিঙ্ক (ব্যাকলিঙ্ক) এর সংখ্যা পরিমাপ করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠানের অনলাইন কনটেন্টের বৈশ্বিক প্রভাবকে প্রকাশ করে।স্বচ্ছতা ও উন্মুক্ততা (১০%): গুগল স্কলার প্রোফাইল অনুযায়ী শীর্ষ লেখকদের সাইটেশন সংখ্যা মূল্যায়ন করা হয়। এটি কোন প্রতিষ্ঠানের গবেষণার উন্মুক্ততাকে নির্দেশ করে।মান (৪০%): উচ্চমানসম্পন্ন ও বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের সংখ্যা মূল্যায়ন করা হয়, যেমন স্কিমাগো (Scimago) থেকে পাওয়া ডেটা।
৪. কাভারেজ:ওয়েবোমেট্রিক্স র্যাঙ্কিং বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩১ হাজার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডেটা বিশ্লেষণ করে। এতে উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরণে বৈচিত্র থাকে এবং অন্যান্য র্যাঙ্কিংয়ের তুলনায় কিছুটা বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরে।
৫. সমালোচনা এবং সীমাবদ্ধতাঅনলাইন উপস্থিতিভিত্তিক এই র্যাঙ্কিংয়ের দুর্বলতা হিসেবে অনেকে এই বৈশিষ্ট্যটিকেই উল্লেখ করেন। কেননা ওয়েব উপস্থিতির ওপর অত্যধিক জোর দেওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাডেমিক গুণমান বা খ্যাতি র্যাঙ্কিংয়ে সঠিকভাবে প্রতিফলিত না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
Advertisement
প্রযুক্তিগতভাবে কম উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্য ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা অর্জন করলেও তারা এই র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকতে পারে। ওয়েব ডেটার ওপর নির্ভরতা অ্যাকাডেমিক গুণমানের চেয়ে এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) বা প্রতিষ্ঠানের আকারের মতো বিষয়গুলোর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
সাম্প্রতিক সংস্করণ অনুযায়ী ওয়েবোমেট্রিক্স র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানে প্রায়ই মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (যেমন হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড) উপস্থিতি থাকে তাদের শক্তিশালী ওয়েব উপস্থিতি এবং গবেষণার কারণে। ইউরোপীয় এবং এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও থাকে প্রথম একশোর মধ্যে।
এ বছর, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে, প্রকাশিত তালিকায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। তবে বিশ্বব্যাপী রাবি রয়েছে ১ হাজার ৪২২তম স্থানে। বিশ্বব্যাপী বুয়েট রয়েছে ১ হাজার ৪৭৪তম স্থানে।
এদিকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ৭৭০তম এবং দেশের সামগ্রিক র্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তি এড়িয়ে ভর্তি পরীক্ষার সর্বশেষ তথ্য পাবেন যেভাবে পরীক্ষার মৌসুমে আত্মবিশ্বাসী থাকবেন যেভাবে মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষার ফলাফলে হতাশ, যা করবেনএএমপি/আরএমডি/এএসএম