মেক্সিকো, কানাডা, চীনের পর এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইইউর বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক ‘অবশ্যই আরোপ হবে’ এবং তা শিগগির কার্যকর করা হবে। তবে যুক্তরাজ্যের বিষয়ে তুলনামূলকভাবে নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
Advertisement
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে এটি (শুল্ক আরোপ) অবশ্যই হবে, আমি আপনাদের তা বলতে পারি। আমি নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা দিতে চাই না। তবে এটি শিগগির কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন>>
বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা বাড়াচ্ছে ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতি ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ মোকাবিলায় প্রস্তুত চীন ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব/ ভারতের শেয়ারবাজারে ধস, রুপির রেকর্ড দরপতনএসময় তিনি ইইউর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ওপর জোর দেন এবং ইউরোপকে আরও বেশি আমেরিকান গাড়ি ও কৃষিপণ্য আমদানির আহ্বান জানান।
Advertisement
ট্রাম্পের এই ঘোষণার আগে ইউরোপীয় কমিশনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, যে কোনো বাণিজ্যিক অংশীদার যদি অন্যায্য বা স্বেচ্ছাচারীভাবে ইইউর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে, তবে তারাও কঠোর জবাব দেবে।
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন যখন ইইউর ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল, তখন পাল্টা জবাবে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বসায়। এগুলোর মধ্যে হার্লি-ডেভিডসন মোটরবাইক, বারবন ও কমলালেবুর রস অন্যতম ছিল। এবারও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে নমনীয় অবস্থানযুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্প তুলনামূলকভাবে নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য কিছুটা ব্যতিক্রম। তবে আমি মনে করি, এটি সমাধানযোগ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার খুব ভালো ব্যবহার করেছেন। আমরা একাধিক বৈঠক করেছি, বেশ কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে, আমাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে। দেখা যাক, আমরা বাজেট ভারসাম্য করতে পারি কি না।
কানাডা ও মেক্সিকোর প্রতিক্রিয়াট্রাম্প সম্প্রতি মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন, যার প্রতিক্রিয়ায় ওই দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
Advertisement
কানাডার অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। প্রাথমিকভাবে ৩০ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের পণ্য—যেমন তামাক, গৃহস্থালি সামগ্রী, আগ্নেয়াস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম—এই শুল্কের আওতায় আসবে।
কানাডা আরও ঘোষণা করেছে, আগামী ২১ দিনের মধ্যে তারা দ্বিতীয় ধাপে অতিরিক্ত ১২৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বসাবে। এতে যাত্রীবাহী গাড়ি, ট্রাক, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, নির্দিষ্ট ফলমূল ও সবজি, গরুর মাংস, শুকরের মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
অন্যদিকে, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম বলেছেন, সমস্যার সমাধান শুল্ক আরোপের মাধ্যমে হয় না, বরং সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে হয়। সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপস করা যাবে না—সমন্বয় সম্ভব, কিন্তু অধীনতা নয়।
অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাবট্রাম্প স্বীকার করেছেন, তার আরোপিত শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ স্বল্পমেয়াদে কিছুটা আর্থিক চাপের মুখে পড়তে পারেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর এশিয়ার শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য কমে গেছে এবং মার্কিন ও ইউরোপীয় স্টক ফিউচারেও পতন দেখা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ানকেএএ/