গণঅভ্যুত্থানের রক্তে কোনো দেবর-ভাবির সম্পর্ক চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, যেই রাশেদ মাকসুদের (বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ) জায়গা হওয়ার কথা ছিল জেলখানায়, ৩৩ লাখ মানুষের অভিভাবকত্ব এই ডাকাতের হাতে আপনারা কীভাবে তুলে দিলেন? এটা গণমানুষের সিদ্ধান্ত হতে পারে না।’
Advertisement
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বারবার যৌক্তিক যে দাবিগুলো করা হচ্ছে, আমরা দেখতে পারছি অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টরা এগুলোকে ছেলেখেলার মোয়ার মতো করে নাচুনি বুড়ির মতো করে খেলছেন। অর্থ উপদেষ্টাকে বলছি, নাচানাচি বন্ধ করেন। আপনাদের আমরা যেভাবে দয়া করে চেয়ারে বসিয়েছি, আবার দয়া করে চেয়ার থেকে নামিয়ে দিতে পারি।’
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরোনো ভবনের সামনে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন
Advertisement
ফুয়াদ বলেন, ‘যখন পুঁজিবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ভাই-বোন খেতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন; দিনের পর দিন প্রতিবাদ করছেন; মাসের পর মাস বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার জন্য, পলিসির জন্য আন্দোলন করছেন- ঠিক সেই সময় আমরা দেখলাম অন্তর্বর্তী সরকার একদল বাটপার, লুটেরাদের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এনে স্টক এক্সচেঞ্জে বসিয়ে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশে যাদের আমরা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রক্ত দিয়ে দয়া করে উপদেষ্টা বানিয়েছিলাম, তারা ৩৩ লাখ পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য গণঅভ্যুত্থান হয়নি, এজন্য শেখ পরিবারকে দিল্লিতে পাঠানো হয়নি, এজন্য আওয়ামী লীগকে আমরা গণভবনের জাদুঘরে পাঠাইনি, এজন্য নতুন নতুন উপদেষ্টা বানানো হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের ভেতরে যেসব কমিশনার অবৈধভাবে লুটপাটের চেয়ারে বসে মার্কেটে ডাকাতি করার চক্রান্ত করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন এবং মাসের পর মাস, আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করবেন। ভদ্রভাবে পদত্যাগ করবেন। ভদ্রভাবে দুদকের মামলায় আত্মসমর্পণ করবেন। লুটপাটকারীদের পুনবার্সন করার রাজনীতি বাংলাদেশে আর হতে দেওয়া যাবে না।’
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে বলছি, অবিলম্বে একটা স্বাধীন তদন্ত কমিশন করবেন। চোর-ডাকাতদের আত্মীয়তার সম্পর্কের ভিত্তিতে না, চুরির ভিত্তিতে জেলে পাঠাতে হবে, ডাকাতির ভিত্তিতে জেলে পাঠাতে হবে। দুদকের মামলার ভিত্তিতে জেলে পাঠাতে হবে। শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ভিত্তিতে এই রাশেদ মাকসুদকে জেলে পাঠাতে হবে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু রাশেদ মাকসুদ না, এর আগের যে চেয়ারম্যান পুঁজিবাজারকে লুটপাট করে শেষ করে দিয়ে গেছেন, যার লুটপাটের প্রপার্টি, সিঙ্গাপুরে টাকা পাচারের ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তাকে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করেননি। তিনি নাকি আপনাদের কোন কোন উপদেষ্টার শাশুড়ি লাগেন, বউ লাগেন, দেবরের জামাই লাগেন। গণঅভ্যুত্থানের রক্তে কোনো দেবর-ভাবির সম্পর্ক চলবে না। গণঅভ্যুত্থানের রক্তের একটাই সম্পর্ক, সেটা হচ্ছে ন্যায্যতার সম্পর্ক, সেটা হচ্ছে ইনসাফের সম্পর্ক, সেটা হচ্ছে বৈষম্যহীন পুঁজিবাজার গঠনের সম্পর্কে।’
এ সময় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমাদের সবার সমর্থন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল সেই সরকার জনগণের সরকার হবে। আমাদের দুঃখ, কষ্ট, দুর্দশা বুঝবে। গত ৫ মাসের যে অভিজ্ঞতা, সরকার জনগণের পালস বুঝতে পারছে না এবং জনগণের দুঃখ-দুর্দশা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তার একটা উদাহরণ শেয়ারবাজারের ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা এখানে দাঁড়িয়েছেন।’
এমএএস/ইএ