রাজবাড়ীতে কুকুরের ধাওয়াকে কেন্দ্র করে মো. আফজাল খান (৩০) নামে এক ভ্যানচালককে বাড়ি থেকে ডেকে এনে আদালত ভবনে হাতবেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে।
Advertisement
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজবাড়ী আদালতের একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় তিনি সদর থানায় মামলা করেন। তবে মামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
নির্যাতনের শিকার ভ্যানচালক মো. আবজাল খান রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের মৃত আনছের খানের ছেলে। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
নির্যাতিত ভ্যানচালক মো. আবজাল খান বলেন, বাড়াইজুরি বাজারের একটি বড় কুকুরসহ কয়েকটি বাচ্চা কুকুর থাকে। বাজারের ব্যবসায়ীসহ অনেকেই কুকুরগুলোকে খাবার দেন। আমিও ভ্যান চালিয়ে যাওয়ার সময় কুকুরগুলো খাবারের জন্য পেছন পেছন ঘুর ঘুর করতো, তাই মাঝে মধ্যে রুটি খেতে দিতাম। হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজবাড়ী সদর থানার এসআই আসাদ স্যারসহ দুই জন দারোগা বাড়িতে এসে আমাকে না পেয়ে আমার ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করে দেখা করতে বলে। তখন আমি জমি-জমা সংক্রান্ত এক মামলার ভয়ে ফোন বন্ধ করে রাখি। পরে মেজো ভাইকে দিয়ে থানা ও কোর্টে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি আমার নামে কোনো অভিযোগ বা মামলা নেই।
Advertisement
পরে ওই দারোগার সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন সুমন স্যার তোমাকে আসতে বলছে। শনিবার সকালে কোর্ট এলাকায় এসে দারোগার সঙ্গে দেখা করি। তখন সুমন স্যার দারোগাকে ফোন করে বিকেল ৪টার সময় তার কাছে নিয়ে যেতে বলেন। সারাদিন কোর্ট এলাকায় থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আমার মেজো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সুমন স্যারের কাছে গেলে সবাইকে রুম থেকে বের করে দিয়ে আমার হাত বেঁধে রুল দিয়ে পিটিয়ে জখম করেন। পেটানোর সময় বলেন, ‘তুই কুকুর পালিশ কেন? তোর কুকুর মানুষের ক্ষতি করে।’ পরে ৬টার দিকে ওখান থেকে বের হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাই এবং সুমন স্যারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছি।
তিনি আরও বলেন, সুমন স্যারের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই এবং আমি তাকে চিনিও না। মূলত ওনার শ্বশুরবাড়ি আমাদের এলাকায়। হয়তো শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে কুকুর ঘেউ করেছে। তখন হয়তো কেউ বলেছে ওই কুকুর আমার। যার কারণে আজ এই অবস্থা।
রাজবাড়ী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১ এর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন হোসেন বলেন, এটা কোনো লাওয়ারিশ বা রাস্তার কুকুর না, একজন মালিকের লালন করা কুকুর। এই কুকুর আমাকেসহ অনেককে ধাওয়া করেছে। এটা নিশ্চিত হওয়ার পর কুকুরের ভ্যাকসিন দেওয়া আছে কি না বা কতদিন আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে জানতে তাকে ডেকে আনা হয়েছিল। কারো পালিত কুকুর কাউকে কামড় দিলে গুরুতর মামলা হতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রথম থেকেই সে এলোমেলো কথা বলে। কুকুর মেরে ফেলবে, বেঁধে রাখবে, খাবার দিবো না বলে আমার এখান থেকে বের হয়ে কার পরামর্শে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে বুঝতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, এই লোকটা কিন্তু সকালে আমার বাসায় এসে মিথ্যা কথা বলেছে। তবে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কার বুদ্ধিতে করেছে, জানি না। শুধু কুকুরের বিষয়ে ডেকে ভ্যাকসিনের বিষয় ও করণীয় নিয়ে তাকে বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রকাশ করা উচিত।
Advertisement
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। ওই ভ্যানচালক থানায় আসার পর অসুস্থ হওয়ার কারণে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
রুবেলুর রহমান/এফএ/জিকেএস