অপূর্ব সুন্দর সমুদ্রসৈকত, সবুজের সমারোহ, ঝিরিঝিরি হাওয়া, লাল কাকড়ার লুকোচুরি, ঢেউয়ের কলতান, নৌকা ভ্রমণ। সব মিলিয়ে মিরসরাইয়ের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত ডোমখালী সমুদ্রসৈকত। উপজেলার সর্বদক্ষিণ-পশ্চিমে ১৬ নম্বর সাহেরখালী ইউনিয়নে এটির অবস্থান।
Advertisement
একটু সুযোগ পেলে এ খাতে বেড়াতে যাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসু লোকজন। বিশাল সাগর, দখিনা বাতাস আর সবুজ প্রকৃতি মুগ্ধ করছে সবাইকে। এখানে কান পাতলে শুনতে পাবেন বিশাল সমুদ্রের গর্জন। দখিনা মিষ্টি ও নির্মল বাতাস শরীর ও মন করে তুলবে শীতল। সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে পূর্ব দিকে তাকালে দেখতে পাবেন দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ।
সেই মাঠে আপন সুখে কাজ করছেন কৃষক। শেষ বিকেলে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষের পাল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন রাখাল। বেড়িবাঁধ সড়কের দুধারে গড়ে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ ও সারি সারি বৃক্ষ। আছে খেজুর, নারকেল, তাল, ঝাউ, সেগুন, আকাশমণি, নিম, বাউল, বাবলাসহ অসংখ্য গাছ। যদি শীতের মৌসুমে যান, তাহলে খেজুরের মিষ্টি রসের স্বাদও নিতে পারবেন।
সড়কের দক্ষিণে কেওড়া, বাইন, গড়ান, গেওয়া, সুন্দরী, হারগোজসহ লবণাক্ত-সহিষ্ণু নানা বৃক্ষ, লতা ও গুল্ম, যা স্থানটিকে সবুজের সমারোহে পরিণত করেছে। যেদিকে তাকাবেন, শুধু সবুজ আর সবুজ। বাঁধের উত্তর ও পশ্চিমে বয়ে চলা দৃষ্টিনন্দন সমুদ্রসৈকত। সাগরের কোলজুড়ে গড়ে উঠেছে ম্যানগ্রোভ বন। এই বনভূমিতে আছে জীববৈচিত্র্যের সমাহার।
Advertisement
বনে দেখা মিলবে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, শকুন, কোকিল, চিল, ডাহুক, সাপ, লজ্জাবতী বানর, মেছো বাঘ, কুমির, হরিণ, শিয়ালসহ বিরল ও মহাবিপন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের বিচরণ ও প্রজনন। খুব ভোরে ও সন্ধ্যাবেলায় ঘাস ও লতাপাতা খাওয়ার জন্য বনভূমির বাইরে চরাঞ্চালে চলে আসে হরিণের দল।
দিনের বেলায় বনের ভেতর প্রবেশ করলে হরিণের পদচিহ্ন ও আনাগোনা লক্ষ করা যায়। বনের মধ্যে খাবারের খোঁজে মহিষের দল চরে বেড়ায়। বনের মধ্যে আরও শুনতে পাবেন পাখিদের কলকাকলির শব্দ। বন শেষ হলে শুরু হয় কাদামাটি।
সাগরের খুব কাছে জোয়ারের সময় ডুবে থাকা জায়গাগুলোয় ভাটার সময় ভেজা মাটিতে ছোট ছোট গর্তে লাল কাঁকড়া, সাগরের বিভিন্ন জাতের কাঁকড়া ও সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ মাথা তুলে বসে থাকে ও ছোটাছুটি করে। মানুষের আনাগোনা পাওয়ামাত্রই গর্তে ঢুকে পড়ে।
আরও পড়ুন
Advertisement
বিশেষ জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের কারণে চার কিলোমিটারের মতো সৈকতের সৃষ্টি হয়েছে। ভ্রমণপিপাসুরা খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারেন সাগরের দৃষ্টিনন্দন, নৈসর্গিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সাগরের ঢেউ যেন তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। প্রতিদিন বিকেলে সাগরপাড়ের সৌন্দর্য দেখতে অসংখ্য মানুষের ঢল নামে।
বিকেলের সময়ে নানা বয়সের মানুষের আগমনে ভিড় জমে সাগরপাড়ে। সমুদ্রের পানির ছোঁয়া দূর করে তাঁদের মনের ক্লান্তি। ঘাটে বাঁধা থাকে বাহারি রঙের ডিঙিনৌকা। জেলেরা মাছের জাল তুলতে সাগরে ছুটে চলেন। কেউ আবার সমুদ্রের নানা প্রজাতির তাজা মাছ নিয়ে ঘাটে নৌকা ভেড়ান। এই মাছ বিক্রি করে তাদের সংসার চলে।
অনেক নৌকাভ্রমণপ্রেমিক জেলেনৌকা নিয়ে পাড়ি দেন সাগরের মোহনায়। জেলেপল্লীর পরিবারের বড়দের সঙ্গে ছোটরাও মাছ ধরতে সাগরে যায়। দুষ্ট ছেলেরা সাগরের পানিতে লাফালাফি করে। বিকেলে সমুদ্রের পাড় থেকে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য অবলোকনের মাধ্যমে সমুদ্রের সৌন্দর্যের তৃষ্ণা মেটান ভ্রমণপিপাসুরা।
কীভাবে যাবেন?দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়দারোগারহাট বাজারে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যেতে হয় ডোমখালী বেড়িবাঁধ। মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়। বড়দারোগারহাট বাজার থেকে বায়ান্নবাঁকের গ্রামবাংলার মেঠো পথ ধরে বেড়িবাঁধ সড়কের ওপর গিয়ে গাড়ি থামে।
থাকা ও খাওয়াএখানে থাকার কোনো আবাসিক হোটেল নেই। পাশ্ববর্তী সীতাকুন্ড উপজেলা সদরে থাকার কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। তবে থাকার জন্য বড়দারোগাহাট থেকে মাত্র ৫০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরের একে খান ও অলংকারে একাধিক ভালোমানের আবাসিক হোটেল আছে। খাবারের জন্য বড়দারোগাট বাজারে ও কমলদহ বাজারে আছে বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেল।
এমএমডি/জেএমএস/এমএস