চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি সংকটে সেবা ব্যাহত হচ্ছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানকার ভঙ্গুর অপারেশন থিয়েটারে এক দশকেও হয়নি কোনো অস্ত্রোপচার। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক সংকটে ভোগান্তিতে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। হাসপাতালটিতে ২৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। তাদের কাঁধে পাথরঘাটা উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভার।
Advertisement
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার পাথরঘাটায় ১৯৭২ সালে নির্মাণ করা হয় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০০৫ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে শয্যা বাড়লেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে রয়েছে চিকিৎসক ও লোকবল সংকট। প্রতিদিন পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ নতুন রোগী আউটডোরে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এছাড়া জরুরি বিভাগে অর্ধশত রোগী সেবা নেন। এর মধ্যে ২৫-৩০ জন হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন।
সরেজমিন পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, ভঙ্গুর অবস্থায় ঝুলে আছে অপারেশন থিয়েটারের লাইট। পাশের আরেকটি কক্ষে পড়ে আছে অপারেশন থিয়েটারের বেড। মেঝেতে ময়লার স্তূপ। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অস্ত্রোপচারের উপকরণ। গত এক দশকেও এ হাসপাতালে কোনো অস্ত্রোপচার হয়নি।
আরও পড়ুন: ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসে’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সিদ্ধান্তঅন্যদিকে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ এক্স-রে। তাই বরাবরের মতোই তালাবদ্ধ এক্স-রে মেশিনের কক্ষ। টেকনিশিয়ান না থাকায় অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে।
Advertisement
লিমা নামের একজন রোগী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই। ডাক্তার দেখালে বাইরের প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করিয়ে আসতে হয়। যেটা সবার ক্ষেত্রে করানো সম্ভব হয় না।’
চিকিৎসক দেখাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক দেখাতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। একজন চিকিৎসককে অনেক রোগী দেখতে হয়। এজন্য সবাই ভালোভাবে সেবা নিতে পারেন না। এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই।’
হাসপাতালে ভর্তি আছেন মো. জয়নাল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। তারপরও বাধ্য হয়ে আছি। কেননা আমরা গরিব মানুষ।’
সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এত বড় একটি হাসপাতালে মাত্র দুজন চিকিৎসক। আমরা যারা ভর্তি আছি ভালো সেবা পেতে হলে ইমারজেন্সিতে মিথ্যা বলতে হয়। সরকারের কাছে দাবি, দ্রুত হাসপাতালে আরও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হোক।’
Advertisement
এক্স-রে করতে আসা হালিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক্স-রে করতে এসে দেখি মেশিন নষ্ট। চিকিৎসক আমাকে বাইরে পাঠিয়েছিলেন। সেই রিপোর্ট নিয়ে আবার চিকিৎসককে দেখাতে এসেছি। আমরা গরিব মানুষরাই সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার।’
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সাহাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সার্জন ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট না থাকায় অপারেশন থিয়েটার আপাতত অকার্যকর। এক্স-রে টেকনিশিয়ান ও রেডিওলজিস্টও নেই। তাই এক্স-রে সেবা বন্ধ রয়েছে।’
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে রোগীবান্ধব করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক সংকটের কথা লিখিতভাবে ঢাকায় জানানো হয়েছে। যাতে সব ধরনের পরীক্ষা করা হয়, সেজন্য যন্ত্রপাতির চাহিদা দিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
নুরুল আহাদ অনিক/এসআর/জেআইএম