চলতি শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণ নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। ফেব্রুয়ারি শেষ হতে চললেও এখনো অসংখ্য শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছেনি। বই ছাপানোয় এমন দেরির কারণ হিসেবে সবসময় ছাপাখানা মালিকদের দোষারোপ করে আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
Advertisement
তবে হঠাৎ, পাঠ্যবই ছাপায় ‘সাফল্য’ খুঁজে পেয়েছে এনসিটিবি। এজন্য তারা ৩৫টি ছাপাখানার মালিককে ঘটা করে সংবর্ধনা দিয়েছে, যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সংশ্লিষ্টদের একপক্ষ বলছে, বই ছাপানোয় চরম ব্যর্থতা ঢাকতে কিছু ছাপাখানার মালিককে কথিত সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এমন সংবর্ধনা দেওয়ার কোনো রেওয়াজ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের চাপে এনসিটিবি বাধ্য হয়ে এ আয়োজন করেছে। এ নিয়ে অনেকে হাসি-ঠাট্টাও করছেন।
আরও পড়ুন
Advertisement
অন্যপক্ষ অবশ্য এটিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন। তবে যাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, তারা আগামীতে এ সংবর্ধনাকে পুঁজি করে বড় কাজ বাগিয়ে নিতে পারেন বলে আশঙ্কা তাদের। সেদিকে এনসিটিবিকে সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন সব পক্ষ।
জানা যায়, রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এনসিটিবি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর। এতে সভাপতিত্ব করেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, সঠিক সময়ে কাজ শেষ করার মধ্যদিয়ে যেসব ছাপাখানা শিক্ষা কার্যক্রমে অবদান রেখেছে, তাদের আগামীতেও বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
Advertisement
এনসিটিবি সূত্র জানায়, চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের প্রায় ৩৯ কোটি ৬০ লাখ পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। ১১৭টি ছাপাখানা এনসিটিবির কাছ থেকে কার্যাদেশ পেয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৫টি ছাপাখানার মালিককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সংবর্ধিত ৩৫ ছাপাখানার মধ্যে ১৯টি শিট মেশিন ক্যাটাগরিভুক্ত এবং ১৬টি ওয়েব মেশিন ক্যাটাগরির।
আরও পড়ুন
১৫ বছর পর এবার হচ্ছে না ‘বই উৎসব’ উপদেষ্টা-এনসিটিবির ওপর আস্থা নেই, পাঠ্যবই কিনছে চড়া দামেসংবর্ধনার বিষয়ে এনসিটিবির কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ করে কেউ গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি। দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের চেয়েছেন বলে এটা করা হয়েছে। তারা নিজেরাও এমন সংবর্ধনার যৌক্তিকতা দেখেন না।
এ নিয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে ফোনকল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এএএইচ/এমকেআর