অর্থনীতি

২০২৭ সালের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে কাজ করছি

সম্প্রতি বাংলাদেশি প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর দুবাইয়ের গালফ ফুড ফেয়ার শেষ হয়েছে, যাতে দেশের ৪১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হচ্ছে দেশের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় আসর বাপা ফুডপ্রো। পাশাপাশি গত সপ্তাহে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাস্কেটের অন্যতম সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।

Advertisement

এ তিন বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এম এ হাশেম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজমুল হুসাইন।

দেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ২০২৭ সালের মধ্যে এই রপ্তানির পরিমাণ দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে আমরা কাজ করছি। এখন বাংলাদেশি পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা বেড়েছে বিদেশে।

জাগো নিউজ: বাপা ফুডপ্রো নিয়ে প্রত্যাশা কেমন?

Advertisement

এম এ হাশেম: বাপা জন্মলগ্ন থেকেই ফুড প্রসেসিং খাতের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। খাতটির জন্য এ মেলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ আয়োজনের উদ্দেশ্য বাপা ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত এগিয়ে নেওয়া।

ফুডপ্রোতে এবার ২২টি দেশের ২০০’র বেশি প্রতিষ্ঠান নিজেদের পণ্য এবং সেবা প্রদর্শন করবে। এছাড়া প্রচুর বিদেশি ক্রেতা এবার মেলায় অংশ নেবে বলে আমরা আশা করছি। কারণ এ বছর আমরা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সহযোগিতার প্রায় প্রতিটি দেশের অ্যাম্বাসির মাধ্যমে সেসব দেশের ব্যবসায়ীদের জানিয়েছি। আশা করছি, কয়েকগুণ বেশি সাড়া পাবো।

আরও পড়ুন বর্ধিত ভ্যাট-শুল্কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা  দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বড় বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করবে বাপা ফুডপ্রো  ৬ মাসে রপ্তানি করা যাবে ২৫ হাজার টন সুগন্ধি চাল 

এখানে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলোও নতুন নতুন পণ্য সম্পর্কে জানতে হাজির হয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে যেমন এই মেলায় বড় পরিবেশকদের দেখা পায়, তেমনই কোন দেশে কোন ধরনের পণ্যের সম্ভাবনা ও চাহিদা বেশি রয়েছে, এ সম্পর্কে জানতে পারে। আবার ভোক্তারা এদেশের পাশাপাশি বিদেশি পণ্যের মান ও গুণাগুণ যাচাইয়ের সুযোগ পায়।

এ চালের প্রচুর চাহিদা। এখন যে পরিমাণে রপ্তানির আদেশ দেওয়া হয়েছে এটা অনেক কম। আমাদের দেশে যখন রপ্তানি বন্ধ ছিল, তখন ভারতের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশি চালের ব্র্যান্ড নকল করে রপ্তানি করেছে। আমাদের বাজার ধরে নিয়েছে অসাধুভাবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: মেলা থেকে কেমন রপ্তানি আদেশ প্রত্যাশা করছেন?

এম এ হাশেম: খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক রপ্তানি ক্রয়াদেশ কম হয়। কারণ এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে বায়াররা সিদ্ধান্ত নেন, আদেশ দেন। তারা স্যাম্পল নেয়, প্রাইস ম্যাচিংও করে। তারপর শুরুতে হয়তো এক কনটেইনার দিয়ে ব্যবসা শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীসময়ে ব্যবসা বাড়ে। তবে দেশে আয়োজিত প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের প্রদর্শনী থেকে সবচেয়ে বেশি অর্ডার এ মেলা থেকেই হয়।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বিদেশে এখন কেমন?

এম এ হাশেম: দেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ২০২৭ সালের মধ্যে এই রপ্তানির পরিমাণ দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে আমরা কাজ করছি। এখন বাংলাদেশি পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা বেড়েছে বিদেশে। সম্প্রতি আমরা দুবাইয়ে গালফ ফেয়ারে অংশ নিয়েছি। সেখানে অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি।

বিদেশিরা জানে, বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের মান অনেক বেড়েছে। এখন আমাদের খাদ্যপণ্য নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।

জাগো নিউজ: গালফ ফুড ফেয়ারে কী পরিমাণে রপ্তানি ক্রয়াদেশ এলো?

এম এ হাশেম: আমাদের তাৎক্ষণিক রপ্তানি ক্রয়াদেশের টার্গেট ছিল ২৫ হাজার মিলিয়ন ডলারের। এটা অলমোস্ট ফুলফিল হয়ে গেছে। পরবর্তীসময়ে আরও অনেক ক্রয়াদেশ আসবে। আমরা সেখানে পৃথিবীজুড়ে যেসব প্রতিষ্ঠান খাদ্যপণ্য উৎপাদন, বাজারজাত এবং রপ্তানি করে তাদের ভালো সাড়া পেয়েছি।

এবছর আমরা ৪১টি প্রতিষ্ঠান গালফ ফুডে অংশ নিয়েছি। আমরা চেয়েছিলাম, আরও অনেক বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে। কিন্তু ওই দেশের কিছু সীমাবদ্ধতায় সেটা হয়নি। আগামী বছর আমরা আরও বড় পরিসরে এ মেলায় অংশ নেবো।

জাগো নিউজ: সরকার সম্প্রতি সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে, এ বিষয়ে কিছু বলুন।

এম এ হাশেম: বাংলাদেশের সুগন্ধি চাল খুব উন্নতমানের। বিদেশে এর প্রচুর চাহিদা। কিন্তু গত কয়েক বছর রপ্তানি বন্ধ থাকায় কৃষকরা এর ন্যায্যমূল্য পায়নি। যে কারণে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। পাশাপাশি রপ্তানি না করতে পেরে অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে রপ্তানি আয় এবং অন্য কৃষিপণ্য রপ্তানি কমে গেছে। সে পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন সরকার আবারও অনুমতি দিয়েছে। এটাকে সাধুবাদ জানাই।

এখন সরকার ২৫ হাজার টন চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে, এক দশমিক ৬০ ডলার দাম বেঁধে দিয়েছে। অর্থাৎ, সরকার চাইলে এক কেজি সুগন্ধি চাল রপ্তানি করে তিন কেজি খাবার চাল আমদানি করতে পারবে।

জাগো নিউজ: কী পরিমাণ চালের চাহিদা বিদেশে আছে?

এম এ হাশেম: এ চালের প্রচুর চাহিদা। এখন যে পরিমাণে রপ্তানির আদেশ দেওয়া হয়েছে এটা অনেক কম। আমাদের দেশে যখন রপ্তানি বন্ধ ছিল, তখন ভারতের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশি চালের ব্র্যান্ড নকল করে রপ্তানি করেছে। আমাদের বাজার ধরে নিয়েছে অসাধুভাবে।

জাগো নিউজ: সুগন্ধি চাল রপ্তানি করলে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব পড়ে, এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

এম এ হাশেম: দেশে যে পরিমাণ সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয়, তার ২৫ শতাংশও চাহিদা নেই। যখন সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ ছিল, পাইকারিতে সুগন্ধি চালের দাম ৭০ টাকায় নেমে গিয়েছিল। কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গুদামে চালের মজুত পড়ে রয়েছে।

আমাদের কাছে শেরপুর এলাকার তথ্য আছে, ওখানে দুই মৌসুম আগের ৫৬ হাজার টন চাল পড়ে রয়েছে। দিনাজপুরে রয়ে গেছে। এভাবে দেশের অনেক জেলায় উদ্বৃত্ত সুগন্ধি চাল আছে, কারণ রপ্তানি বন্ধ।

সার্বিকভাবে এ চাল রপ্তানি হলে দেশের কৃষকরা যেমন উপকৃত হবেন, রপ্তানি আয় বাড়ায় দেশের প্রতিটি মানুষও উপকৃত হবে।

এনএইচ/এএসএ/জিকেএস