র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়ার প্রায় ১৬ মাস পর পরিবারের কাছে ফিরেও ভালো নেই ঢাকার ধামরাইয়ে রহমত উল্লাহ। এখনও স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা। নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছে পরিবারটিও।
Advertisement
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামে রহমত উল্লাহর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
রহমত উল্লাহর স্বজনরা জানান, নিখোঁজের ১৬ মাস পর নিজ বাড়িতে ফিরে চুপচাপ ছিলেন রহমত উল্লাহ। দু’একটি বাক্য ছাড়া তেমন কিছুই বলতেন না তিনি। প্রতিবেশী ও গণমাধ্যমসহ অপরিচিত সবাইকে এড়িয়ে চলতেন। তবে রহমত উল্লাহ এখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেছেন। গণমাধ্যমের সঙ্গেও কিছু কিছু প্রসঙ্গে কথা বলছেন।
সরাসরি কথা হলে রহমত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভারতবিরোধী ও ইসলাম নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় জঙ্গি সন্দেহেই তারা আমাকে তুলে নিয়ে আটকে রেখেছিল। এসময় তারা নির্মম নির্যাতন চালায়।’
Advertisement
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাতে র্যাব পরিচয়ে একটি দল তার বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর তাকে পরিবারের সবার সামনে থেকে তুলে নিয়ে তাদের গাড়িতে তোলে। গাড়িতে তুলেই চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। যেখানে অন্ধকার একটি ছোট কক্ষে চোখ বেঁধে বন্দি রাখা হয়।’
তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের নামে চালায় নির্যাতন। প্রশ্ন করতে থাকে জঙ্গিবাদ নিয়ে। তাদের ধারণা আমি আমার অনুসারী তৈরি করেছি। সেই অনুসারীদের নাম জানতে চাইতো। প্রায় ৬ মাস বন্দি রাখার পর অন্যত্র আরেকটি স্থানে নিয়ে আটকে রাখে ৩ মাস। এরপর বেনাপোল দিয়ে আমাকে ভারতে পাচার করে। সেখান থেকেই সেদেশের পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। গেলো বছর ২১ ডিসেম্বর ৭ মাস জেল খাটার পর সর্বশেষ দমদম জেলখানা থেকে গাড়িতে করে সীমান্তে আনা হয়। ওইদিনই দিবাগত রাত ১২টার দিকে আমাকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হয়।’
তিনি জানান, এরপর তিনি গোমস্তাপুর থানায় যান। থানা পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরিবারের তথ্য নেয় এবং খবর দিয়ে তাদের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে প্রিয় মানুষটিকে পরিবারের মাঝে ফিরে পেলেও তার মানসিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত স্বজনরা। এছাড়া তার নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত তারা।
Advertisement
রহমত উল্লাহর বড় ভাই ওবায়দুল্লাহ বলেন, ভাইটি আমার এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি। তবে হঠাৎ হঠাৎ মাথা গরম হয়ে যায় তার। মানসিক ও শারীরিক অবস্থা কোনোটাই ভালো যাচ্ছে না। সড়কের পাশে বাড়ি হওয়ায় এখনো কোনো গাড়ি থামলে আঁতকে উঠি। মনে হয় কেউ এসে আবার তুলে নিয়ে যাবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রহমত উল্লাহকে জঙ্গি তকমা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। একাধিক প্রতিবেশী জানান, রহমত নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। আল্লাহ ও রসুলের আয়াত ফেসবুকে পোস্ট করতেন। এটাই ছিল তাদের কাছে অপরাধ। জঙ্গি কিংবা দেশবিরোধী কোনো কার্যকলাপ কখনো চোখে পড়েনি।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, পরিবারটির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পরিবারটিকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
এফএ/এমএস