বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারলে সব সংস্কার ব্যর্থ হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম।
Advertisement
তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি জুন নাগাদ শেয়ারবাজারে ভালো অবস্থা দেখতে পারবো।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’- এ তিনি এসব কথা বলেন।
মোমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের শেয়ারবাজার অনেক সংকুচিত। গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজার অনেক পিছিয়েছে। তবে একই সময়ে বিশ্বের অন্যসব দেশের শেয়ারবাজার এগিয়েছে। এই অবস্থায় বর্তমান সময়ে দেশের সব স্টেকহোল্ডার বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে ইতিবাচক কাজ করছে।
Advertisement
তিনি বলেন, আমার এরই মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কাজের ফলাফল পেতে একটু সময় লাগবে। অনেকটা একটি ভবনের ভিত্তি নির্মাণ যেমন বাইরে থেকে দেখা যায় না, সেরকম। তবে ভবনের উপরে নির্মাণ কাজটা সবাই দেখতে পায়। কিন্তু আসল কাজটা করা হয় ওই ভিত্তি নির্মাণের সময়।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, সবকিছুই বিফলে যাবে যদি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারি। এজন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৪টি কাজ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চারটি কাজের মধ্যে একটি- দ্রুত সময়ে কিছু ভালো কোম্পানি নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এছাড়া নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যা সমাধান, ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া ও ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা। এই ট্রেডিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের যে ভূমিকা থাকার কথা ছিল, তা হয়নি। প্রত্যাশার লেভেল থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
আরও পড়ুনমন্দার বাজারে ‘পচা’ শেয়ারের দাপট এক সপ্তাহে বাজার মূলধন কমলো ৩ হাজার কোটি টাকাস্টক এক্সচেঞ্জগুলোর অনেক সমস্যায় ছিল। এরমধ্যে অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মানবসম্পদের অদক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। আর ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যোগ করেন মোমিনুল ইসলাম।
Advertisement
তিনি বলেন, ডিএসইতে কোনো চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নেই। আমরা চাটার্ড অ্যাকউন্ট্যান্ট নেওয়ার চেষ্টা করছি।
সফটওয়্যার সমস্যায় ডিইএসইতে লেনদেন বিঘ্ন ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে একটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সক্ষমতার জায়গা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। কারণ ট্রেড (লেনদেন) এখন সবই ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হচ্ছে। সেটেলমেন্টও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হচ্ছে। আমরা যে প্ল্যাটফর্ম তুলছি, সেটা আমরা এই মুহূর্তে দেখছি আন্তর্জাতিক মানের প্ল্যাটফর্ম। তারপরও ছোট ছোট যে বিচ্যুতি হচ্ছে, সেখানে আমি বলবো প্রসেসগত কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যে ধরনের স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল থাকা দরকার, সেগুলো বাস্তবায়ন করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসবে।
জুন নাগাদ শেয়ারবাজার ভালো অবস্থায় থাকবে কিসের ভিত্তিতে বলছেন। জুনের মধ্যে কি সব সংস্কার শেষ হয়ে যাবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মোমিনুল ইসলাম বলেন, জুন নাগাদ সব রিফর্ম (সংস্কার) শেষ হবে না। জুন নাগাদ রিফর্মের কিছু জিনিস মার্কেটে পজিটিভ সিগনাল দিতে পারে। পরিবর্তন সব সময় হতে হবে। নতুন সুযোগ আসবে, নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। সুতরাং ৫, ১০ বছরও পরেও রিফর্ম হতে হবে। এটা যে ভালো, এটা যে কাজ করছে। আমি আশাবাদী জুন মাস নাগাদ সেখানে একটা অবস্থান তৈরি হবে। আর একটা ম্যাক্রো ইকোনিম সিচুয়েশন।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের মূল্যস্ফীতির অবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা, ব্যাংকিং সেক্টরের একটা অস্থিরতা, সেখানে আমরা আশা করছি কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। এখনো আমরা প্রত্যাশিত অবস্থায় যেতে পারিনি। আমরা দেখছি মূলধনী মেশিনারিজ আমদানি কমে গেছে। রিয়েল ইকোনমিক বিনিয়োগ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে শেয়ারবাজার তো পুরো মার্কেটের প্রতিচ্ছবি। তো সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমরা আশাবাদী জুন নাগাদ শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ধারা দেখতে পারবো।
সাংবাদিকদের আর এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কার করতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সংস্কার করতে গিয়ে রোগী যাতে মারা না যায় সেটা দেখতে হবে। একটা জায়গায় সমন্বয় করা হয়েছে, ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের ওপরে। আমাদের আরও কিছু দাবি-দাওয়া আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর থেকে বলা হয়েছে এগুলো পজিটিভলি দেখবে। দ্বিতীয়ত, ভালো কিছু কোম্পানি আনতে পারলে বাজারে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হবে। অনেক বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে, তারা সক্রিয় হবেন। একটা ইতিবাচক ধারা তৈরি হবে।
এমএএস/কেএসআর