বিবিধ

সবার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চয়তাই সম্প্রীতি

রাজধানীর মগবাজারে সেন্ট থমাস চার্চে ‘নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক সেমিনার আয়োজিত হয়েছে।

Advertisement

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ইক‍্যুমেনিক্যাল খ্রিস্টান ট্রাস্ট (ইসিটি) এবং সেন্ট থমাস চার্চের যৌথ উদ্যোগে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারটি বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে ১২টা ৫০ মিনিটে শেষ হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন ইক‍্যুমেনিক্যাল খ্রিস্টান ট্রাস্টের (ইসিটি) চেয়ারম্যান রেভা. ইম্মানুয়েল মল্লিক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্ট থমাস চার্চের সিনিয়র ব‍্যক্তিত্ব জর্জ বিনিময় রায়।

সেমিনারের শুরুতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস (সেক্রেটারি, ইক‍্যুমেনিকেল খ্রিস্টান ট্রাস্ট)।

Advertisement

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেন্ট থমাস চার্চের সিনিয়র ব্যক্তিত্ব জর্জ বিনিময় রায় বলেন, আমাদের দেহকে রক্ষা করে নিরাপত্তা। এর বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। এসব নিরাপত্তার দায় বর্তায় আমাদের সরকারের ওপর। আমাদের মূল নিরাপত্তাগুলো হচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার নিরাপত্তা।

তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি আমাদের একটা বন্ধনে আবদ্ধ করে। সব ধর্মেরই নিজস্ব কিছু বিশ্বাস আছে। সম্প্রীতি হলো সবাই সবার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চয়তা। সেটা নিশ্চিত করেন আমাদের সরকার। কোনো একটা বিশেষ ধর্মকে গুরুত্ব দিলে সেটা বিনষ্ট হয়।

জাতীয় ঐক্যই জাতির মেরুদণ্ড উল্লেখ করে জর্জ বিনিময় রায় বলেন, একটা জাতির মধ্যে ঐক্য থাকলে তারা যে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে একতা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আজকে আমরা যে সভ্যতার উপর দাঁড়িয়ে আছি, সেটা এনে দিয়েছে একতা। আমরা যদি এক থাকি আমদের নিরাপত্তা থাকবে। সুতরাং, আমাদের মধ্যে একতা সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমাদের কর্তব্য হলো, নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ঐক্য নিশ্চিতে নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের অবদান রাখা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে রেভারেন্ড ইম্মানুয়েল মল্লিক বলেন, সম্প্রীতি ও ঐক্য রক্ষায় আমাদের সকলের পাশাপাশি মিডিয়ারও গুরুত্ব রয়েছে। আমরা বিগত আন্দোলনে মিডিয়ার ভূমিকা দেখেছি।

Advertisement

সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাসির উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশপ সাইমন বাড়ৈ, সদস্য, ইসিটি বোর্ড, জন সুশান্ত বিশ্বাস, ট্রেজারার, ইক‍্যুমেনিকেল খ্রিষ্টান ট্রাষ্ট (ইসিটি) প্রমুখ।

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, কোনো কোনো জায়গায় সেনাবাহিনীকে ঐক্যের প্রতীক বলা হচ্ছে, কোথাও ধর্মকে বলা হচ্ছে। আমি বলছি সেনাবাহিনী হচ্ছে নিরপেক্ষ একটা শক্তি। কেউ যদি নিরপেক্ষ থাকে সেখানে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ। আমাদের ছাত্রদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে তারাও ঐক্যের প্রতীক হতে পারে। সেটা তারা বিগত আন্দোলনে দেখিয়ে দিয়েছে। বাস্তবিক অর্থে ঐক্য ঠিক করতে হলে সামাজিক ন্যায়বিচার অত্যন্ত জরুরি। আগামীর পৃথিবীকে সুন্দরভাবে সজাতে হলে, সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতিকে রক্ষা করতে হলে জাতীয় ঐক্য জরুরি।

৫ আগষ্ট পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত দেশকে রক্ষা করেছে উল্লেখ করে ইসিটি ট্রেজারার জন সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, দেশ দাঁড়িয়ে আছে তিনটি পিলারের ওপর। সেটা হলো জনগণ, সরকার ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর সঠিক সিদ্ধান্ত আমাদের দেশকে পথ হারাতে দেয়নি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। তাড়াহুড়ো করে আমরা দেশকে আরেকটি ফ্যাসিস্ট এর হাতে তুলে দিতে চাই না।

এ সময় স্বাধীন বিশ্বাস বলেন, সম্প্রীতি মানে হলো একে অন্যের সঙ্গে মিলে-মিশে থাকা। সম্প্রীতি বজায় রাখতে হলে সবার মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য ঐক্যের প্রয়োজন আছে।

সেমিনারে সাংবাদিক সুজাউল ইসলাম বলেন, ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নামে একটা বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি।

এছাড়া, দৈনিক খবরের কাগজের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, দীর্ঘ সময় অন্যায় অত্যাচার জুলুমের শিকার একটি জাতিকে ছাত্র-জনতা এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রক্ষা করেছে। এখানে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। পরাজিত শক্তি ঐক্য বিনষ্ট করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্নভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার সবরকম চেষ্টা করছে।

এএমএ