শীত এলেই হিমালয়ের উত্তরের দেশ সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া থেকে এসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) লেকগুলোতে মেতে উঠতো পরিযায়ী পাখি। আসতোও ঝাঁক ধরে। ফলে ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখিদের ‘অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে পরিযায়ী পাখিদের আগমন। বেশিরভাগ লেকই থাকছে পাখিশূন্য।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পরিযায়ী পাখি আগমন শুরু হয়। হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপাল এভারেস্ট পর্বতের কাছাকাছি হওয়ায় বছরের এসময়ে প্রচুর তুষারপাত ঘটে। অতিরিক্ত শীত থেকে জীবন বাঁচাতে খাদ্যের খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আসে পাখিগুলো। জাবি ক্যাম্পাস নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল, জলাশয়গুলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ায় নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে এখানে অবস্থান করে।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে কমছে পাখির সংখ্যা। নিয়মিতভাবে জলাশয়গুলো পরিষ্কার না করা, দর্শনার্থী, গাড়ি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে আতশবাজি ও উচ্চ শব্দে গান বাজানো এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। লেকের পানি দূষণ, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ করে পাখি ফ্লাই জোন নষ্ট করা এবং এসব ব্যাপারে প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবেও লেকে পাখি আসা কমেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১২টি লেক থাকলেও এবার মাত্র তিনটি লেক মনপুরা সংলগ্ন লেক, আল-বেরুনী হল সংলগ্ন এবং ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের লেকে পাখি এসেছে। তবে পাখির পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই কম।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার বলেন, ‘পরিযায়ী পাখিরা জাবির ঐতিহ্য। কিন্তু এখানকার পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমা শুরু হয় করোনাপরবর্তী সময়গুলোতে। পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত মানুষের চাপ ইত্যাদি এর অন্যতম কারণ।’
জনসচেতনতা ও পাখি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০০১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে পাখিমেলা।
পাখিমেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষ্য করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। আমরা প্রতিবছর ৪-৫ প্রজাতির হাঁস দেখতে পাই। তবে এ বছর লেকগুলোতে আমরা এই পর্যন্ত মাত্র দুই প্রজাতি দেখতে পেরেছি। আমরা যদি পাখির আবাসস্থল নিশ্চিত করতে পারি, পাখি যদি নিরাপদবোধ করে, সাচ্ছন্দ্যবোধ করে তাহলে আমরা আশা করি তারা আবার লেকগুলোতে ফিরে আসবে।’
এসআর/জিকেএস
Advertisement