বায়ুদূষণ রোধে এর আগে দেওয়া ৯ নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে নির্দেশনা সাত দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করে বিবাদীদের আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে রোববার (১২ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এসময় আদালত বর্তমানের বায়ু দূষণের পরিস্থিতি এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন।
এছাড়া আদালত তার আদেশে বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে বিবাদীরা বায়ুদূষণ বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়িত করে আগামী ২৬ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেবেন।
আদালতে এদিন শুনানিতে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) মো. তানিম খান।
Advertisement
এর আগে ঢাকার বায়ুদূষণ বন্ধে ২০২০ সালে উচ্চ আদালতের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্ট।
ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে আদালতের আগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) আবেদনটি করে। সেটি শুনানি নিয়ে বায়ু দূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দেন।
‘ঢাকার বাতাসে নতুন বিপদ’ শিরোনামে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এটি যুক্ত করে এইচআরপিবির পক্ষে গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করা হয়। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের অন্য একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ অন্তর্বর্তী নির্দেশনা দেন। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে দূষণ রোধে কয়েক দফা নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনকারীপক্ষ সম্পূরক একটি আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের অন্য একটি দ্বৈত বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দেন।
আইনজীবীর তথ্যমতে, ৯ দফার মধ্যে ঢাকা শহরে মাটি/বালু/বর্জ্য পরিবহন করা ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা; নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালু/সিমেন্ট/পাথর/নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা; সিটি করপোরেশন রাস্তায় পানি ছেটানো, রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোঁড়াখুঁড়ির কাজে দরপত্রের শর্ত পালন নিশ্চিত করা, সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও উত্তীর্ণ হওয়া সময়সীমার পরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা, পরিবেশগত সনদ ছাড়া চলমান টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা, মার্কেট/দোকানের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগে ভরে রাখা এবং বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা রয়েছে।
Advertisement
আদালতের এমন নির্দেশনা থাকার পরও কর্তৃপক্ষ অতিসামান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এবং অধিকাংশ নির্দেশনা পালন না করায় সম্প্রতি ঢাকা শহর বায়ু দূষণের বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে এতে ঢাকার বায়ু দূষণের মাত্রা কিছুটা কমে এবং পরবর্তীতে নির্দেশনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় ঢাকা শহর আবারো বায়ু দূষণের শীর্ষ শহরে পরিণত হয়েছে মর্মে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদন মানবাধিকার কমিশন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এর নজরে আসলে আদালতের নির্দেশনা ও বাস্তবায়ন চেয়ে আবেদন করা হয়। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে বর্তমানের বায়ু দূষণের পরিস্থিতি এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। এছাড়াও শুনানি শেষে আদালত আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিবাদীরা বায়ু দূষণ বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়িত করে আগামী ২৬ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
শুনানিতে রিটকারী এইচআরপিবির কৌশলী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন যে, উক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বায়ু দূষণের মাত্রা কিছুটা কমলেও পরবর্তীতে আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ঢাকা শহর আবারও বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঢাকা শহর বায়ু দূষণের বিশ্বের এক নম্বর স্থান অধিকার করেছে। বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধিতে মানুষের জনজীবনের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যের ব্যাপক হানি ঘটছে। শুরু তাই নয় দূষণের কারণে শতশত মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে।
রিটের পক্ষে আবেদনকারী হলেন অ্যাডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরি এবং রিট পিটিশনের বিবাদীরা হলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মোট ১১ জন।
এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস