দেশে প্রথমবারের মতো গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ রোগের ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান এবং তার গবেষক দল।
Advertisement
গবেষষণা কার্যক্রমে ড. মো. বাহানুর রহমান ছাড়াও ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (বাস-ইউএসডিএ) প্রোগ্রামের অর্থায়নে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর এ গবেষণা শুরু হয়ে। যা চলে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০২৪ সালের ১১ জুন তিন বছর মেয়াদী এ গবেষণা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে উপস্থাপন করা হয়।
জানা যায়, গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ মূলত গাভীর ওলানে সংঘটিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগে গাভীর ওলান ফুলে যায়। ওলানে জ্বালাপোড়াসহ ব্যথা হয় ও গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায়। অধিক সংক্রমণে গাভীর দুধ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে খামারিরা ব্যাপক লোকসানে পড়ে। এই রোগের ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হওয়ায় প্রতিষেধক চিকিৎসায় কার্যকরী ফল পাওয়া যায় না।
Advertisement
অধ্যাপক ড. বাহানুর বলেন, ২০২০ সালে আমরা গবেষণাটি শুরু করি। ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ ৯ জেলার ২০৯ খামারে জরিপ পরিচালনা করি। জরিপে ৪৬% গাভীতে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ খুঁজে পাই। মাঠ পর্যায় থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে সোমটিক সেল কাউন্টের মাধ্যমে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ ও এর তীব্রতা নিরুপণ করি। পরবর্তীতে গবেষণাগারে দীর্ঘ ক্লিনিকাল টেস্ট ও প্রক্রিয়াকরণ শেষে এই ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হই। ৫১৭ গাভী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই ভ্যাক্সিন তৈরিতে চারটি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এগুলো গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনা থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। ব্যাকটেরিয়াগুলো জুনোটিক স্বভাবের কারণে প্রাণী থেকে মানুষেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অধ্যাপক বাহানুর বলেন, ভালো দুধ উৎপাদনে গাভীর ওলানের সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ছত্রাকের আক্রমণে গাভীর এই রোগ হয়ে থাকে। দেশে পূর্বে এই রোগের ভ্যাক্সিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে এই ভ্যাক্সিন দেশে আর পাওয়া যায় না। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে আমরাই প্রথম ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিনটি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ হলেই সেটি সফল হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনটি প্রায় শতভাগ কার্যকর।
Advertisement
ভ্যাক্সিনটির ব্যবহারবিধি সম্পর্কে তিনি বলেন, উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনটি ইঁদুর ও গিনিপিগে প্রয়োগ করে নিরাপত্তা যাচাই করা হয়েছে। ভ্যাক্সিনটি গাভীর গর্ভাবস্থায় প্রয়োগ করতে হয়। এর দুইটি ডোজ গাভীকে দিতে হবে। প্রথম ডোজ গর্ভাবস্থার ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ডোজ বাচ্চা হবার আগ মুহূর্তে অর্থাৎ ৯ থেকে সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে দিতে হবে। প্রতি প্রাণিকে ৫ মিলি করে ভ্যাক্সিন প্রতি ডোজে দিতে হবে। এই ভ্যাক্সিনের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ভ্যাক্সিনের দুইটি ডোজ গাভীকে দিলে ম্যাসটাইটিসে আক্রান্তের সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে। বাজারজাত করা সম্ভব হলে এই ভ্যাক্সিনের দাম কৃষকের নাগালের মধ্যেই থাকবে।
আসিফ ইকবাল/এএইচ/জিকেএস