চানখাঁরপুলে আয়েশি ভাবভঙ্গি নিয়ে গুলি করেছিলেন কনস্টেবল সুজন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্র-জনতার কর্মসূচি চলাকালে ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে খুব আয়েশ ভাবভঙ্গি নিয়ে গুলি চালিয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল সুজন হোসেন। এসময় এই গুলিতে সাতজন নিহত হয়। তার আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল, এটাকে তিনি পারসোনালি নিয়েছিলেন।

এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুলিশ কনস্টেবল সুজন হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর রোববার (১২ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।

মিজানুল ইসলাম বলেন, কনস্টেবল সুজন হোসেন এপিবিএন’র সদস্য। উত্তরা থেকে তাকে ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে শান্তিপূর্ণ ছাত্র-জনতার ওপর খুব ঠান্ডা মাথায় গুলি করছিলেন। খুব আরাম-আয়েশ করে, ভাবভঙ্গি নিয়ে গুলি করার কারণে সাতজন মারা গেছেন। তিনি অন্য মামলায় গ্রেফতার ছিলেন। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে হাজির করার নির্দেশ দেন। আজ এ মামলায় ডিটেনশন আদেশ দিয়েছেন। পরবর্তী তারিখ হচ্ছে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি।

প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, এ ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শাহবাগ থানার মামলায় সুজন হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ১ জানুয়ারি তাকে হাজির করার জন্য (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) আবেদন দিয়েছিলাম। ট্রাইব্যুনাল সেটা মঞ্জুর করেছিলেন। আজ তাকে হাজির করা হয়েছে এবং কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ওই ঘটনায় আরও কারা জড়িত সেটা তদন্ত করা হচ্ছে।

এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে কয়েকজনকে হত্যার অভিযোগে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ কনস্টেবল সুজন হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১২ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ। ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ। এসময় ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান তরফদার ও মনোয়ার হোসেন তামিম উপস্থিত ছিলেন। আর আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

গত ১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সুজনকে ১২ জানুয়ারি হাজিরের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী আজ সকালে সুজনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নতুন ভবনের হাজতখানায় আনা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় মানুষকে নিশানা করে গুলি করছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সদস্য মো. সুজন হোসেন। পরে সুজন হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়।

গত জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। এ অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস