আইন-আদালত

সাতক্ষীরা পৌর মেয়রের বরখাস্তের আদেশ হাইকোর্টে অবৈধ

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেট অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাজকিন আহমেদ সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌর বিএনপির সদস্যসচিব।

Advertisement

এ সংক্রান্ত বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রোববার (১২ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ। তিনি আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদের আসনটি শূন্য ঘোষণা করে গত ২৩ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর–১ শাখা। দুর্নীতি, নাশকতা ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জন কাউন্সিলরের করা অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা অপর এক প্রজ্ঞাপনে নতুন মেয়রের কার্যভার গ্রহণ করা পর্যন্ত পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কাজী ফিরোজ হাসানকে প্রশাসনিক, আর্থিক ক্ষমতাসহ মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই দিন চিঠি দিয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের শূন্য পদে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবকে অনুরোধ করা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ

একই বছর ২৩ নভেম্বরের পৃথক প্রজ্ঞাপন এবং ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তাজকিন আহমেদ। তিনি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌর বিএনপির সদস্যসচিব। আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস ও আইনজীবী তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া এবং বিধি বহির্ভূতভাবে পৌরসভার ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার সংলগ্ন জমিতে মার্কেট নির্মাণের দরপত্র আহ্বানসহ ১০ দফা অভিযোগ উল্লেখ করে পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে ১২ কাউন্সিলর গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন।

ডিসি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পালকে নির্দেশ দেন। নির্দেশমতো তিনি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদকে অনাস্থা প্রস্তাবের পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় কার্যধারা কেন নেওয়া হবে না মর্মে এই চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাজকিন আহমেদ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের চিঠির জবাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না দেওয়ায় কাউন্সিলর ফিরোজ হাসানকে (ভারপ্রাপ্ত মেয়র) অনাস্থা প্রস্তাব সম্পর্কিত সভা ডাকার আহ্বান জানান।

২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে সাতক্ষীরা পৌরসভা পরিষদ কক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানের সভাপতিত্বে সভায় ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ১১ জনই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। তবে ওই সভায় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না।

Advertisement

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর–১ শাখার উপসচিব আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

আইনজীবী তানভীর আহমেদ জানান, মোট তিনটি গেজেট ইস্যু করা হয়। প্রথমটিতে মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় প্যানেল মেয়রকে-১ প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং তৃতীয় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ এর ৩৩(২) ধারা অনুসারে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। এ তিনটি গেজেট তিন মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/এসআইটি/জিকেএস