বঙ্গবন্ধু সেতু, যমুনা নদীর ওপর অবস্থিত একটি সড়ক ও রেল সেতু। সেতুটি ১৯৯৮ সালে চালু হয়। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় ট্রেন যাত্রীদের৷ এই দুর্ভোগ এড়াতে সেতুটির ৩০০ মিটার অদূরে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের দীর্ঘতম ‘যমুনা রেল সেতু’। যা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। তবে এটি চালু হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগ থাকলেও চলবে না ট্রেন।
Advertisement
শনিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, নব-নির্মিত রেলসেতু দিয়ে এরইমধ্যে ১২০ কিলোমিটার গতিতে দুটি লাইনে সফলভাবে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই এই উদ্বোধনের নানান প্রক্রিয়া চলছে। তবে এটি উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগ থাকলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বঙ্গবন্ধু সেতুর নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে জাগো নিউজকে বলেন, এখন বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর একটি লাইন হওয়ায় দুই পাড়ের স্টেশনে সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘসময়। এতে মাত্র ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লাগছে এক ঘণ্টার বেশি। এই দুর্ভোগ থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে ২০২০ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে তৎকালীন সরকার। সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। অপরদিকে রেল সেতু চালুর পর আন্তঃনগর, লোকাল, কমিউটার ও মালবাহী ট্রেনসহ ৮৮টি ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করতে পারবে।
Advertisement
রেল সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের আগস্টে যমুনা নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর করা হয়।
এর আগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেতুটির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্ট ভেঞ্চার।
জানা যায়, ১৯৪৯ সালে জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম রাজনৈতিক পর্যায়ে যমুনা সেতু নির্মাণের দাবি উত্থাপন করেন। পরবর্তী ১৯৯৪ সালের ১০ এপ্রিল সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকল্পের ভৌত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয় এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন ব্যতীত সব কাজ ১৯৯৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
এম এ মালেক/এফএ/এমএস
Advertisement