দেশজুড়ে

বিষাক্ত হাইড্রোজ ও গো-খাদ্যের চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়

রাজশাহীতে গো-খাদ্যের নামে ভারত থেকে আমদানি করা নিম্নমানের চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়। আর এসব গুড় আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে হাইড্রোজ।

Advertisement

রাজশাহীর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ১০টি গুড় পরীক্ষা করে সবকটিতে হাইড্রোজে ও ডিটারজেন্টের উপস্থিত পেয়েছেন। গুড়ে ভয়ঙ্কর হাইড্রোজ ব্যবহারের ফলে মানবদেহে বাড়ছে ক্যানসার ও কিডনি রোগের ঝুঁকি।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ৩০০ ট্রাকে গো-খাদ্যের চিনি আমদানি করা হয়। প্রতিটি ট্রাকে ৪০ টন করে চিনি থাকে। সে হিসাবে আমদানি করা হয়েছে ১২ হাজার টন। ডিসেম্বর মাসে সেটি বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ মাসে ৬০০ ট্রাক চিনি আমদানি হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১১ দিনে আমদানি করা হয়েছে ১৪০ গাড়ি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার প্রায় ১১ লাখ ৮ হাজার ১৮টি খেজুর গাছ রয়েছে। একটি গাছে বছরে ২০ কেজি খেজুরের রস হয়। সেটি থেকে ৮ কেজি গুড় হয়। সে হিসাবে গুড়ের উৎপাদন হতে পারে ৮৮ লাখ ৬৪ হাজার ১৪৬ কেজি। আর বিক্রি হবে ১৪১ কোটি ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। অনলাইনের বাজার ধরলে মোট গুড় বিক্রি হবে ১৫০ কোটি টাকার বেশি।

Advertisement

বানেশ্বরে একটি গুড় তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, চুলায় জ্বাল দেওয়া হচ্ছে খেজুরের রস। কিছুটা গরম হলেই তাতে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভারত থেকে গো-খাদ্যের নামে আনা নিম্নমানের টিনজাত চিনি। গুড়ের ঘনত্ব বাড়াতে দেওয়া হচ্ছে ডালডা আর আটা। দেখতে আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার হচ্ছে হাইড্রোজ ও রং।

নাম না প্রকাশ করে কারিগর জানান, গুড় তৈরি করতে হাইড্রোজ, ডালডার পাশাপাশি চুন, ফিটকিরিও ব্যবহার করা হয়।

শুধু বানেশ্বর নয়, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট, বাঘা উপজেলার অনেক কৃষকবাড়ি ও আড়তে চলছে এমন ভেজাল গুড় তৈরির কারবার। নজরদারি না থাকায় ভেজাল গুড় তৈরি-বাজারজাত করতে কোনো সমস্যাই হয় না কারিগর-ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, গৃহস্থ তাদের কাছ থেকে এ গুড় কিনে নিয়ে যায়। অনেক ব্যবসায়ীও এখান থেকে গুড় নিয়ে যান।

রাজশাহীর নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, গত বছর আমরা ১০টি গুড় সংগ্রহ করেছিলাম। তাতে দেখা গেছে, কোনো গুড়ই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব গুড়ে ফিটকিরি ও ডিটারজেন্ট পাওয়া গেছিল। এ বছর আমরা পরীক্ষা এখনো শুরু করতে পারিনি। তবে এর মধ্যে আমরা ফলোআপের জন্য নমুনা সংগ্রহ করবো।

Advertisement

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান খান বাদশা বলেন, এগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এগুলো আমাদের খাওয়া অনুচিত। এগুলো খেলে খাওয়ার পর, খাদ্যনালী ও পাকস্থলী আলসার ও ক্যানসার হতে পারে। শরীরের শোষণ হওয়ার পর লিভার ডিজিস হবে। কিডনি ফেইলর হতে পারে এমনকি কিডনিতেও ক্যানসার হতে পরে। বেশি পরিমাণে খেলে তাৎক্ষণিকভাবে আলসার হবে। আর বহুদিন অল্প অল্প করে খেলে এটি ক্যানসার হবে।

তিনি আরও বলেন, গুড়ের মধ্যে ব্যবহার করা হাইড্রোজ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। হাইড্রোজের ফলে মানবদেহে ক্যানসার ও কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, এমন অনিয়ম কৃষক পর্যায়ে নেই বললেই চলে। যারা ব্যবসা করে, তারা এসব করলে করতে পারে। কৃষক যে গুড় তৈরি করছে সেই গুড় নির্ভেজাল।

সাখাওয়াত হোসেন/আরএইচ/জেআইএম