সাহিত্য

দুলাল সরকারের তিনটি কবিতা

ধান উড়ানো শরীর দ্যাখো

ধান উড়ানো শরীর দ্যাখো রৌদ্রে দাঁড়ানোকালো পাথরের গায়ে যেন দ্রাবিড় রমনী এক,কুলা হাতে অল্প কাৎ ধান উড়ায়, মুখে গান খসা আঁচলে বিশেষ ভঙ্গিমায় মুগ্ধ এক শিল্পের ভাস্কর্য; চিরায়ত বাংলার প্রত্যন্তে নারীশিল্পের বিমূর্ত ছন্দে দেখি যাকে আমার বাড়ির পাশে ধুলার চাদরে মোড়া কেউ কি তা জানে? হরোপ্পা বর্ণমালার লিপি পাঠোদ্ধার হয়নি এখনো.... চিরকাল রহস্যই থেকে যাবে... ঐ চোখ, স্তনের নির্মাণ, তিল ঠোঁটে উরুর সন্ধিতে এক ফালি চাঁদের নির্জনতা সম্পর্কেতুমি জানো হাত ও আঙুলের যৌথ সমন্বয়ে শিল্পের নান্দনিকতায় এক দগ্ধ একতারা?

Advertisement

****

উদ্বাস্তু জীবন

একি মুখ না মুখোশ? আলগা হচ্ছে সম্পর্কগুলো—মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে চেনা মুখ; চেনা মানুষ তার লালিত চেতনা, চেনা ঘর, পথ ও পাথেয়,অপরিচিত মনে হয় নদী, বিকেলের মাঠ—তবে এরা কি? মুখোশের আড়ালে মুখঝাপসা হৃদয়; খোয়াইয়ের পাড়ে বসেআমার শান্তিনিকেতনে দেখা বিকেলের সেই সূর্য মুখ, সেই অরুণ আলোর ভাষা আমার রচিত সেই অন্তস্থ ভুবন—সান্ধ্য ভাষায় লেখা প্রিয় অভিধান আহা, মেনে নিতে হবে সব—উদ্বাস্তু জীবন।

****

Advertisement

তুমি সব জানো

হঠাৎ আমার মনে হলো, তুমি সব জানোআমার ঘুম না আসার কারণ—অস্তমিত সূর্যের গোপন অনুষ্ঠান সম্পর্কে তোমার ধারণা রয়েছে, কেন রাত্রির হাতে সমর্পিত হলো দিন—অন্য সব নক্ষত্রেরা জানে নাসূর্যের এ আত্মসমর্পণের কাহিনি, যেমন আমরা জানি না কখন হারিয়ে ফেলেছিমানবিক সৌন্দর্য, আকাশের ঔদার্য;অথচ তোমার জানার কথা ভালোবাসারকষ্টের ইতিহাস, কাল্পনিক সেই সন্ন্যাসিনীরসাথে কেন ঘর ছেড়েছিলাম তা-ও তুমি জানো, কেন দু’জনে নিরুপায় হয়েছিলাম শ্মশানে গিয়ে রাত কাটাতে—তার কি বৈধ কারণ, কেন গোপন দীর্ঘশ্বাসআমাদের কুরে কুরে খায়, ভেঙে ভেঙে যাই নির্জনে দু’জনে।

এসইউ/জিকেএস