রনি হাওলাদার ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার শৈশব কেটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নে। তার বাবা পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। তিনি মিঠাপুর এলএন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে বিবিএ এবং এমবিএ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে ৯ম গ্রেডের চাকরিতে কর্মরত।
Advertisement
তার ক্যাডার হওয়ার গল্প, নতুনদের জন্য নির্দেশনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাম হোসাইন—
জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?রনি হাওলাদার: আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো লাগছে। যেহেতু পুলিশ ক্যাডার আমার প্রথম পছন্দ ছিল। তাই এই ক্যাডার পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?রনি হাওলাদার: আমি যেহেতু বাণিজ্যের ছাত্র ছিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হবো। মাসে লাখ টাকা স্যালারি হবে। স্যুটেড-ব্যুটেড হয়ে অফিস করবো। তাই বিসিএস বা অন্য কোনো জবের জন্য প্রস্তুতি নিইনি। কিন্তু ফ্যামিলি থেকে সব সময় বিসিএস দেওয়ার জন্য বলতো। মনে আছে ওই সময়ে বিসিএসের হাইপ অনেক বেশি ছিল। বিসিএস ক্যাডারদের সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা আমাকেও আকর্ষণ করতো। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করি। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করে বিসিএসের যাত্রা শুরু হয়।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?রনি হাওলাদার: দিনটি ছিল ২১ জুলাই ২০১৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসিএসের আঁতুরঘর সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে গেলাম। সবার বিসিএস পড়ার সিরিয়াসনেস দেখে মনে হলো স্বপ্ন পূরণ এত সহজ হবে না। পরদিন নীলক্ষেত থেকে এক সেট প্রিলির বই কিনে প্রস্তুতি শুরু করে দিলাম। সে সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে থাকি। হলে পড়াশোনা হয় না। তাই সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে নিয়মিত যেতাম। একটা সিট নিতে সেই কাকডাকা ভোরে দৌড়ে গিয়ে লাইনে ব্যাগ রাখতাম। লাইব্রেরি খুলতো সকাল ৮টায় কিন্তু ব্যাগ রাখতে যেতাম সকাল ৬টায়। তা না হলে সিট পাওয়া মুশকিল ছিল। আমার মনে আছে, যখন লাইব্রেরির গেট খুলতো; তখন ঢোকার জন্য যুদ্ধ লেগে যেতো। মনে হতো বিসিএসকে ছাপিয়ে এ এক আরেক যুদ্ধ। যারা এখানে পড়ছেন বা পড়েছেন; তারাই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পড়তাম। মাঝে সকালের নাস্তা, লাঞ্চ আর নামাজের জন্য বের হতাম। এভাবেই চলতো আমার স্বপ্নজয়ের দিনগুলো।
আরও পড়ুন
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি যেভাবে নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় হলেন তারিকজাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?রনি হাওলাদার: আজকের এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার ফ্যামিলির। তাদের সাপোর্ট এবং অনুপ্রেরণা না পেলে আজকের এখানে আসতে পারতাম না। বিশেষ করে আমার বড় ভাই শামীম হোসেন প্রচুর সাপোর্ট দিয়েছেন। যখনই ব্যর্থ হয়েছি সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে সর্বদা পাশে ছিলেন।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?রনি হাওলাদার: আমরা জানি, বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হচ্ছে বিসিএস। এখানে প্রতিটি ধাপের জন্য চাই ক্ষুরধার প্রস্তুতি। বিসিএসে ভালো প্রস্তুতির জন্য নিরবচ্ছিন্ন পড়াশোনা দরকার। কোনো সপ্তাহে ১২-১৪ ঘণ্টা করে পড়লাম আবার কোনো সপ্তাহে বইয়ের কাছেই গেলাম না, এমন যেন না হয়।
Advertisement
নতুনদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে—বিসিএসে শর্টকার্ট প্রিপারেশনের কথা মাথায় আনা যাবে না। সিলেবাস ধরে টপিকগুলো ভালো করে পড়ে ফেলতে হবে। নিজের স্ট্রং জোন, উইক জোন চিহ্নিত করে পড়াশোনা করতে হবে। বইপড়ার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। এজন্য পত্রপত্রিকাসহ সংবাদমাধ্যমের বিকল্প নেই। পরীক্ষার আগে বারবার রিভিশন দিলে প্রিলিতে ভালো করা সম্ভব। কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পেতে লিখিত পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং খাতার উপস্থাপনা অবশ্যই ব্যতিক্রম হতে হবে। এজন্য প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকের উপস্থাপনা পরিহার করে নিজস্ব মেকানিজম ব্যবহার করতে পারলে বেশি নম্বর পেয়ে এগিয়ে থাকা যায়। ভাইভায় বিনয়ী এবং আত্মবিশ্বাসী থাকলে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। বিসিএসে সাফল্য আর ব্যর্থতা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাই কোনো ধাপে ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়া যাবে না।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?রনি হাওলাদার: র্যাব ফোর্সের প্রতি আমার আলাদা প্যাশন রয়েছে। ভবিষ্যতে নিজেকে র্যাব প্রধান হিসেবে দেখতে চাই। ব্রিটিশ পিরিয়ড থেকে এখন পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ ভীতি রয়েছে। সেই ভীতি দূর করতে চাই। পুলিশ যে জনগণের সত্যিকারের বন্ধু, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে তা প্রমাণ করতে চাই।
এসইউ/এমএস