ফিচার

মাছ ধরাই শুধু জামালের শখ

জামাল হোসেইন বেড়ে উঠেছেন শহুরে পরিবেশে। তবে শৈশবের দুরন্তপনায় কোনো কমতি ছিল না। বর্তমানে ৫৩ বছর বয়সী হলেও তার মন প্রায়ই ফিরে যায় কৈশোরের সেই দিনগুলোতে। যখন পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে পুকুরপাড়ে ঘুরে বেড়ানো আর মাছ ধরার আনন্দে মেতে থাকতেন। শহরের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি মাঝে মাঝে ফিরে যান সেই স্মৃতিতে। মহাখালীর টিবি গেটের ভেতরের ছোট্ট পুকুরটি যেন এখনো তার সেই পুরোনো শখ মেটানোর একমাত্র অবলম্বন।

Advertisement

মহাখালীর মতো ব্যস্ত এলাকায় এমন একটি পুকুরের সান্নিধ্য পাওয়াটা যেন প্রকৃতির এক শান্ত কোণ খুঁজে পাওয়ার মতো। তবে এই পুকুরটি জামালের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। সময় পেলেই তিনি মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে পুকুরপাড়ে এসে বসে পড়েন। মাছ ধরা তার অন্যতম বড় শখ। শৈশবে পুকুরের ধারে বসে অপেক্ষা করার সময়ের উত্তেজনা, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা সবকিছু তার কাছে আজও একই রকম রোমাঞ্চকর মনে হয়। এখনো তিনি ছিপ ফেলে অপেক্ষা করেন কিন্তু মাছ ধরার চেয়ে তার কাছে পুরো প্রক্রিয়াটাই বেশি উপভোগ্য। মাছ না পেলেও তিনি তাতে কোনো আপত্তি দেখেন না।

পুকুরটি বেশ কয়েকজন মিলে ইজারা নেওয়া। তবে জামালের এতে সমস্যা নেই। মাছ ধরার পর তিনি মাছগুলো ইজারাদারদের হাতে তুলে দেন। কারণ তার আসল উদ্দেশ্য হলো মাছ ধরা, রাখা নয়। মাছ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তার চিন্তা নেই। তিনি বলেন, ‘মাছ ধরা মানে শুধু মাছ পাওয়া নয়, প্রক্রিয়াটা উপভোগ করাটাই আসল। পুকুরের পাশে বসে ছিপ ফেলে অপেক্ষা করা, পুকুরের শান্ত জল, আশেপাশের সবুজ গাছপালা এসবের মধ্যেই শান্তি খুঁজে পাই।’

আরও পড়ুন এখনো মনে আছে মীনা-রাজু-মিঠুকে?  সমুদ্রের কৌশলী শিকারি মিমিক অক্টোপাস 

জামালের শৈশবের দুরন্তপনা ছিল তার বন্ধুদের সঙ্গে পুকুরের ধারে ঘুরে বেড়ানো, মাছ ধরা, আর ছিপ দিয়ে কত বড় মাছ ধরা যায় সেই প্রতিযোগিতা করা। এখনো সেই শখটা তার মধ্যে জীবন্ত। শহরের জীবনে পুকুরের সংখ্যা কমে গেলেও পুকুরটি যেন তার শৈশবের সেই দিনগুলোর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। প্রতি সপ্তাহে সময় বের করে এখানে চলে আসেন, মাছ ধরার পাশাপাশি অন্যদের সাথে গল্প করেন, পুকুরপাড়ের পরিবেশ উপভোগ করেন।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘এই মাটিতেই জন্ম, এখানেই বড় হয়েছি। ছোটবেলায় পুকুরে মাছ ধরা শিখেছি। এখনো সময় পেলেই এখানে এসে বসে থাকি।’ তার জন্য মাছ ধরা শুধু শখ নয় বরং এটি তার জীবনের একটি অংশ। তিনি বিশ্বাস করেন, শহুরে জীবনে কিছুটা সময় প্রকৃতির মাঝে কাটানো অত্যন্ত জরুরি। তার মতে, ‘যতই ব্যস্ত থাকি, এই পুকুরটা আমাকে একটু শান্তি দেয়। মাছ না পেলেও আমি তৃপ্ত।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের কাছে শখের আনন্দই বড়। মাছ ধরা প্রধান উদ্দেশ্য নয়। তবে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো, শৈশবের স্মৃতির সাথে একাত্ম হওয়া; এসবই আমাকে জীবনের প্রকৃত আনন্দ দেয়।’

এসইউ/জিকেএস

Advertisement