খেলাধুলা

টাইগারদের কেন এই করুণ পরিণতি?

টাইগারদের কেন এই করুণ পরিণতি?

জিততে দরকার ছিল ২৪৫ রান। ওই রান করতে একটা পর্যায়ে স্কোর ১ উইকেটে ১০০। হাতে ৯ উইকেট। আর বাকি ৩৩.৩ ওভার। উইকেটে ২ সেট ব্যাটার তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ওভারপিছু লক্ষ্য পাঁচেরও কম। সেখানে দুই ব্যাটার ওভারপিছু ৬ রানের বেশি (৬.১৩) করে তুলছিলেন।

Advertisement

হাতে পর্যাপ্ত উইকেট, সব মিলে একটা মজবুত অবস্থা। কোনোরকম চাপ নেই। এরকম পরিস্থিতিতে ১০০ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন। আর পরের ৫ রানে খোয়া গেলো ৭ উইকেট। ভাবা যায়! এও সম্ভব?

এত বিপর্যয় যে পাড়ার ও গলির ক্রিকেটেও হয় না। মাত্র ২৬ বলের ব্যবধানে নাজমুল হোসেন শান্ত (২৩), লিটন দাস (০), তানজিদ তামিম (৬১), তাওহিদ হৃদয় (১), মেহেদী হাসান মিরাজ (০), তানজিম হাসান সাকিব (১) আর তাসকিন আহমেদ (০) আউট! এত খারাপ অবস্থা, এমন করুণ পরিণতি কীভাবে হয়? গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ সারাদিন বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের মনে ওই একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।

শ্রীলঙ্কার কোনো বোলার হঠাৎ সংহার মূর্তি ধারণ করলে একটা কথা ছিল। এমন যদি হতো যে, দুই লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আর কামিন্দু মেন্ডিস এমনই বল করছিলেন, যেগুলো ছিল আনপ্লেয়াবল। ব্যাপারটা মোটেই সেরকম ছিল না। যদি তাই হতো, তবে জাকের আলী শেষদিকে কীভাবে এত স্বাচ্ছন্দ্যে খেললেন? মোস্তাফিজুর রহমানের মতো লোয়ার অর্ডার কীভাবে কয়েকটি ওভার অনায়াসে পাড়ি দিলেন?

Advertisement

এটা ঠিক, লঙ্কান স্পিনার হাসারাঙ্গা লেগব্রেক, সোজা ডেলিভারির সাথে গুগলির অনুপম মিশ্রণে খুব ভালো লাইন ও লেন্থে বল করেছেন। কামিন্দা মেন্ডিস দুই হাতে দুই ধরনের মানে ডানহাতি ব্যাটারদের জন্য লেফট আর্ম অর্থোডক্স স্পিন আর বাঁহাতিদের জন্য অফব্রেক ছুড়ে খানিক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। তাই বলে একদম খেলতেই পারবেন না ব্যাটাররা?

যে ব্যাটাররা একের পর এক সাজঘরে ফিরেছেন, তারা তো কেউই একদম নতুন নন। সবাই রীতিমতো পরিণত, অভিজ্ঞ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তাদের কাছে নতুন নয়। হাসারাঙ্গাকেও কেউ প্রথম খেলেননি।

পরিসংখ্যান জানায়, লেগস্পিন গুগলি বোলার হাসারাঙ্গা বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮ ম্যাচ খেলেছেন। তবে ডান ও বাঁহাতে স্পিন বোলিং করার বিরল ক্ষমতার অধিকারী কামিন্দু মেন্ডিসের বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা ছিল প্রথম ম্যাচ।

তারপরও তাদের দুজনকে একদমই খেলা যাবে না, এমন নয়। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটারদের ব্যাট চালনা দেখে মনে হয়েছে হাসারাঙ্গা শেন ওয়ার্ন আর কামিন্দু মেন্ডিস ডান হাতে মুত্তিয়া মুরালিধরন আর বাঁহাতি সাকিব আল হাসান, রবীন্দ্র জাদেজা কিংবা ড্যানিয়েল ভেট্টোরির মানের কেউ। তাদের বোলিং খেলাটা জগতের সবচেয়ে কঠিনতম কাজ।

Advertisement

কেন এই না পারা? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কেউ যথাযথ ও সঠিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিক শক্তি কম। তারা মেন্টালি তত টাফ নন। একবার ভাঙন ধরলে তা রোধ করার ক্ষমতা কম। ভাঙাচোরা অবস্থা সামলাতে যে কঠিন মনোবল ও প্রবল মানসিক শক্তি দরকার, তা তাদের অনেক কম। এর সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও কম।

হাসারাঙ্গার লেগস্পিন, গুগলি এবং কামিন্দু মেন্ডিসের দুই হাতের দুই রকমের ডেলিভারি এগুলো সামলানোর জন্য সবার আগে দরকার ছিল মেন্টাল টাফনেস। শুধু টেকনিক বা টেম্পারমেন্ট দিয়ে নয়, তাদের যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে আরও বেশি মনোযোগ-মনোসংযোগ দরকার ছিল। অস্থির না হয়ে স্থির হয়ে কোনোরকম বাড়তি চাপ না নিয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টাই ছিল সত্যিকার কাজ।

কিন্তু শান্ত আউট হওয়ার পর লিটন, মিরাজ ও হৃদয়ের কেউ সে কাজটি করতে পারেননি। যদি তারা মাথা ঠান্ডা রেখে বলের মেধা ও গুণ বিচার করে সিঙ্গেলস-ডাবলসে খেলতেন, তবে ইনিংস সাজাতে পারতেন। আলগা বলগুলো থেকে স্কোরের চাকা দ্রুত করারও সুযোগ আসতো। তারা ওই পর্যন্ত অপেক্ষাই করতে চাননি। যেন ঘাবড়ে গেছেন শুরুতেই।

এ ঘাবড়ে যাওয়াটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা। সব কন্ডিশন আর পরিস্থিতিতে মাথা ঠিক রেখে যারা খেলতে পারেন, তারাই বড় তারকা হন। বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সেই বড় তারকা হওয়ার তাড়নাটাই যেন নেই! তারা দু-একটা ম্যাচ ভালো খেলতে পারলেই খুশি। ক্রিকেটটা যে শুধু মাঠের খেলা না, মাথা খাটানো আর মাইন্ড গেমও, সেই বোধটা না আসলে দিনের পর দিন এমন পরিণতি দেখতেই হবে!

এআরবি/এমএমআর/জেআইএম