সাহিত্য

আয়নাঘর তুমি এমন কেন এবং অন্যান্য

আয়নাঘর তুমি এমন কেন?

Advertisement

জুলাইয়ের এই ক্ষতের কুশীলব নিদারুণ নিষ্ঠুরএজন্য বড় করুণা হয়; আমি কবো কার কাছে?বড় দুঃখ লাগে কারো ঠোঁটের বেফাঁস কথার সুরেজিহ্বা ছিঁড়ে না এখনো এজন্য আরও বড় দুঃখ লাগেআমার কথা কবর হয়; স্বদেশ বুলেটবিদ্ধ লাশেথরে থরে সাজানো চেতনা লাল-সবুজ পতাকা কাঁদেএজন্য বড় দুঃখ লাগে, কলিজা ছিঁড়ে যন্ত্রণা করেআমার যন্ত্রণা আমার লাশের নব্য ইতিহাস হাসে

সমস্ত বাঙালি হত্যা হলো; কান্নার বাঙালি কই পাবে নির্বাক পাথর চাপায় ক্রোধের দেশচোখ খুলেতাকিয়ে আছে লোকান্তরের শেষ ঠিকানার কোঠা থেকেআমি পথের পাগল হবো, পথের ধুলোয় মিশে যাবোকেউ কোথাও নেই, কেউ কোথাও নেইপাগলের সুখ মনে মনে, মনের অজান্তে কবিতা লিখে যাবোজ্ব্যান্ত কাব্য চলে না এখানে, মৃত কবিতায় বলে যাবোকাপুরুষের মতো কফিনে পেরেক ঠোকাব আমিচেতনার চৈতার বউ রঙিলা, বিবেক আবদ্ধ করে দিয়ে

গুপ্তচর বালুর গহীনে আইন তলিয়ে যাবেসাগরের ভয়ংকর গুপ্তস্থলে সুশাসনের তরী ডুবিয়ে নেবেচকচকে আলো ব্যামো মিলনায়তনে স্বপ্ন ও সত্যের সম্ভাষণ হবেজনগণ পৃথিবী গ্রহের থেকে অন্য গ্রহে কোথাও হারাবেদর্শক-শ্রোতারাও অসুরের শরণাপন্ন হবে অ্যাসেম্বলি কোর্ট ধর্মাশ্রয়ী ধর্মশালা ঝরাপাতায় লুটাবেহয়তোবা ঝরা ফুলের বাগানেও ফুল ফুটবে

Advertisement

প্রকাশ্য খবরাখবরের সূর্য আলোকিত হলে ইন্টারনেটেরবিচ্ছিন্ন কবর করে লুকানো আর মানেই হয় নাহিংস্র শিকারির বুলেট দিয়েই পাখিদের চিরতরে ঘরে ফেরানোর এমন ষড়যন্ত্র রপ্ত করে স্বপ্নের আয়নাঘরে।

****

দর্শকশূন্য, সব জাদরেল খেলোয়াড়

আমার সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষীই ভেজাতে থাকেতেল দিয়ে, ওপেকভুক্ত দেশের পরিশোধিত অপরিশোধিত সব তেল নিয়ে।

Advertisement

অথবা পৃথিবীর বিখ্যাত স্বর্ণখনির সকল স্বর্ণের মতো গল্প আসরে আমাকে দামি করে তোলে চলতে ফিরতে উঠতে বসতে কানে আসে, মজা লাগেকিন্তু অপবিজ্ঞানের ভাবার সময় নেই একেবারে।

ওপেকভুক্ত দেশের ভূগর্ভস্থ খনিজ জানে বেশি,কতটুকু তেল আছে তার বুকেআমি তেলের খনি না হয়েও জেনেছি, জেনে যাই, কারা কারা কতটুকু ভিজিয়েছে আমাকেজলকে জলের পানিতে ভেজাই, তেল নিয়ে করি তেলেসমাতি কারবারওইসব নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেইতেল মেরে যদি কমানো যেত বৈশাখের তাপমাত্রার কালজবজবে তেলেই আমি ভিজে যেতাম সঙ্গে নিয়ে মহাকালতুমি শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখতে সোনার বাংলার এইচলমান পুতুল পুতুল খেলাঘর; এখানে কোনো দর্শক নেইআমি তুমি আমরা সবাই জাদরেল খেলোয়াড়...

****

আজব খেলার নাম মানুষ

মানুষেরা খেলা করে, খেলা কখনো মানুষকে করে নাআশ্চর্য জগতের বাসিন্দা—মানু্ষকে নিয়ে খেলে;পৃথিবীর জনপ্রিয় খেলা আজ উল্লাস করে স্তম্ভিত হয়ে:মাঝেমধ্যে তালি দেয়, গালি দেয়, ক্লান্ত হয়ে বসে থাকেপুরস্কার নেয়, তিরস্কার দেয়,প্রেম, ঘৃণায়, ভালোবাসায়...

খেলা শেষ হলে ঘরে ফেরে; ঘর ফেরে না খেলায়এ জগতে মানুষকে নিয়ে খেলার অপর নাম—কবর, শ্মশান আর সমাধি চিরন্তন সুখের ঠিকানা।

****

জীবিত ও মৃত

মরণ, মৃতকে মারো কেন? দাও না বাঁচতে!জীবিত, জীবনকে বাঁচাও কেন?দাও না মরতে!

নিরস্ত্র নিরীহ তাকে বুলেট ছোড়ে কেমন করে?ওখানে ঈশ্বর থাকে শুধু চাক্ষুষ চোখটি মেলে...বিচারকে, সঠিক বিচার দিতে, তুমি ক্ষ্যাপাটের মতোক্ষেপেছিলে কার হয়ে? বাংলার বৃক্ষ পাখি জানে।

বাঁচতে আর মরতে ছেঁড়ে দাও,শুধু ঈশ্বরের হাতে। শুধু জন্ম ও মৃত্যুর মতো—কারো নেই ধ্বংসের কোনো অধিকার

****

হৃদয়তৃষ্ণা চৈতালি বাঁকে

চারিদিকে অশান্তির ক্ষুরে ছুটে চলেছে সবাইশান্তি লুকিয়ে অশান্তিরই খোঁজে—পেছন ফেরে না কেউ আর।

অনবরত পদদলিত হয়, রক্তের বৃষ্টিতে ঘরদোর খুঁজে পদ পদবির নতুন সন্ধানে—সম্মান বিত্ত আর নামডাকের ঘোরতর অন্ধকারেএখানে বরং ক্লান্ত হয়, ক্ষান্ত হয় না মোটেও

সড়কজমা মেঘের অথবা উঠোনে আষাঢ় থামা শ্রাবণঅথবা শখের বশে পাশের বাঁধা পুকুর, ছাদে অথবা খাল-বিলের, আমন-বোরোর ফসলের মাঠেস্বচ্ছ আয়নার জলে, দেখে না মুখটি সে নিজেরনিজেকেই ভুলে গেছে—শান্তি খুঁজতে খুঁজতে;আসল প্রশান্তি যেন ঘরে প্রকাশ্য ঝুলকালির মতোতা আসে খুব গোপনে গোপনে নীরবে সযতনে

রক্তস্রোত উপহার দিয়ে নিষ্পাপ মাসুম সাজেযেমন পিতার খুনি সাধু হলে, মুক্তি চাই জোড়া হাতে বাবা ঘুমিয়ে থাকে কবরে—ঘোরে নবাবজাদা বাহিরে।

এসইউ/এএসএম